বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:মড়ার মৃত্যু - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মড়ার মৃত্যু

জায়গায় বাসা নিয়েছিল যেখানে লোকালয় কম, মাঠ-ময়দান ও গাছপালাই বেশী। টালিগঞ্জ ট্রাম-ডিপোর পিছন দিয়ে যে-সুদীর্ঘ রাস্তাটি সোজা গড়িয়াহাটার দিকে অগ্রসর হয়ে গেছে, দিলীপের বাসাবাড়ীটি ছিল তারই এক ধারে। তার পড়বার ঘরে ব’সে চারিদিকে তাকালে দেখা যায় কেবল সুনীল আকাশ, সবুজ মাঠ আর দূরে ও কাছে বন-জঙ্গলের জীবন্ত ছবি। কোথাও কোন গোলমাল নেই, মাঝে মাঝে কেবল দ্রুতগামী মোটরের কর্কশ চীৎকার আশপাশের মৌনব্রত ভাঙ্‌‌বার অল্পস্বল্প চেষ্টা করে।

 কিন্তু বাসাবাড়ীতে দিলীপ খালি একলাই থাকত না। একতালাটি ছিল দিলীপের এবং দোতালায় বাস করত ভৈরবচন্দ্র চৌধুরী নামে আর একটি যুবক। তার সঙ্গে এখনো দিলীপের ভালো ক'রে পরিচয় হয়নি, কারণ ভৈরব অল্পদিনই এই বাসায় এসে উঠেছে।

 একদিন সকালে কতকগুলো মড়ার হাড় ও মোটা মোটা ডাক্তারি কেতাবের মাঝখানে ব'সে দিলীপ নিজের মনেই পড়াশুনা করছে, এমন সময়ে তার দুই বন্ধু প্রতাপ ও অবনী এসে হাজির। এদেরও দুজনের বাড়ী ছিল টালিগঞ্জেই এবং তারা প্রায়ই দিলীপের সঙ্গে গল্প করতে আসত।

 বই থেকে মুখ তুলে দিলীপ সুধোলে, “কিহে, সক্কাল-বেলায় কি মনে ক'রে?”

 প্রতাপ একখানা চেয়ারের উপরে ব’সে প'ড়ে বললে, “আমি এসেছি তোমার সঙ্গে গল্প করতে, আর অবনী এসেছে তার হবু-ভগ্নীপতির সঙ্গে দেখা করতে।”

 দিলীপ একটু আশ্চর্য্য হয়ে বললে, “আমার বাড়ীতে অবনীর হবুভগ্নীপতি? তার মানে?”