পাতা:ময়ূখ - রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়.djvu/১৫১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
একবিংশ পরিচ্ছেদ
১৪৩

জন খোজা ও রজ্জু হস্তে একজন তাতারী কক্ষে প্রবেশ করিয়া দ্বার রুদ্ধ করিল।

 খোজাগণ ময়ূখকে নামাইয়া তাঁহার বন্ধন মোচন করিল এবং তাঁহাকে জহানারা বেগমের সম্মুখে রাখিয়া দূরে সরিয়া দাঁড়াইল। মশাল হস্তে তাতারীগণ প্রাচীরের পার্শ্বে সারি দিয়া দাঁড়াইল। যে কুঠারহস্তে আসিয়াছিল, সে বহুদিনের রক্তস্রোতে বিবর্ণ কাষ্ঠখণ্ড টানিয়া লইয়া আঘাতের জন্য প্রস্তুত হইল। তাতারী ফাঁসীকাষ্ঠে রজ্জু লাগাইয়া গৃহতলের মধ্যদেশ হইতে কাষ্ঠখণ্ড সরাইয়া ফেলিল, সঙ্গে সঙ্গে যমুনা-জলের কুলুকুলুধ্বনি শ্রুত হইল।

 শাহ্‌জাদী জিজ্ঞাসা করিলেন, “সর্‌ওয়ার খাঁ, দেখিতেছ?” ময়ূখ দক্ষিণ হস্তের বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠে উপবীত জড়াইয়া চক্ষু মুদ্রিত করিলেন। শাহ্‌জাদী কহিলেন, “দেখ এখনও যদি ধর্ম্মপত্নীকে গ্রহণ কর, তাহা হইলে মুক্তি পাইতে পার।”

 ময়ূখ মুদ্রিতনয়নে কহিলেন, “শাহ্‌জাদী, আমি হিন্দু, প্রাণভয়ে মিথ্যা কথা বলিব না। আমি ব্রাহ্মণ, মুসলমান নহি, আমার নাম ময়ূখ, সর্‌ওয়ার খাঁ নহে, এই রমণীকে আমি চিনি না। আমি মরণের জন্য প্রস্তুত, বিলম্ব করিয়া যন্ত্রণা বাড়াইবেন ন॥”

 “তুমি পত্নীগ্রহণ করিবে না?”

 “আমার পত্নী নাই, কারণ এখনও আমার বিবাহ হয় নাই।”।