পাতা:ময়ূখ - রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়.djvu/৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
নবম পরিচ্ছেদ
৫৯

কহিল, “বাবাজী, আট আনা পয়সার জন্য কে মরিতে যাইবে? কাল রাত্রিতে সাতগাঁয়ে ফিরিঙ্গির সহিত ফৌজদারী সিপাহীর ভীষণ হাঙ্গামা হইয়া গিয়াছে, ফিরিঙ্গিরা হটিয়া পলাইয়া গিয়াছে, তাহাতে তাহাদের রাগ আরও বাড়িয়া গিয়াছে, এখন সাতগাঁয়ের লোক পাইলে তাহারা শূলে দিবে।” তাহার কথা শুনিয়া বৈরাগী আর কোন উত্তর খুঁজিয়া পাইল না, শম্বুকের পটহ হইতে ঘন ঘন নস্য লইতে লাগিল। ক্ষণকাল পরে জনৈক দীর্ঘাকার শ্যামবর্ণ ব্রাহ্মণ তিন্তিড়িতলে আসিয়া উপস্থিত হইল। তাহাকে ইতস্ততঃ চাহিতে দেখিয়া বৈরাগীর মনে ভরসা হইল, সে উঠিয়া দাঁড়াইয়া ব্রাহ্মণকে জিজ্ঞাসা করিল, “ঠাকুর মহাশয়, প্রণাম হই, আপনি কি কোন স্থানে যাইবেন?” ব্রাহ্মণ বিরক্ত হইয়া বৈরাগীর আপাদমস্তক নিরীক্ষণ করিল এবং ক্ষণকাল পরে কহিল, “বাপু হে, কোথায় যাইব তাহা স্থির করিতে পারিতেছি না। তুমিও কি কোথাও যাইবে না কি?” “আজ্ঞা, সে প্রভুর ইচ্ছা, হুগলী যাইবার মানস ছিল, কিন্তু নৌকা পাওয়া যায় না। রাধে কৃষ্ণ, রাধে কৃষ্ণ, ঠাকুর মহাশয় কি সাতগাঁয়ে নূতন আসিয়াছেন?” “কেন বল দেখি?” “এই চাল চলন দেখিয়া বলিতেছি। সহরের লোকের চাল চলন আলাহিদা রকমের, আমিও পল্লীগ্রামের লোক।” “বটে, তোমার নিবাস কোথায়?” “কাটোয়ার নিকটে উদ্ধারণপুরে, ঠাকুর মহাশয়।” “আপনার?” “মুখ্‌সুসাবাদের নিকটে ভীমেশ্বরে।”