পাতা:ময়ূখ - রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়.djvu/৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
একাদশ পরিচ্ছেদ
৭৭

পাগলিনী বা ললিত কহিল, “তুমি কি বলিতেছ আমি বুঝিতে পারিতেছি না।” যুবক জিজ্ঞাসা করিল, “তুমি পেশোয়াজ ও ওড়না কোথায় ফেলিলে? তোমাকে বড় সুন্দর দেখাইতেছিল।” ললিতা বিস্মিত হইয়া বলিল, “তুমি কি বলিতেছ? সে কাহাকে বলে?” “তুমিত বজরায় পেশোয়াজ পরিয়া আসিয়াছিলে? তোমার হাতে সেতারে সিন্ধু, ভূপালী বড় মিষ্ট লাগিতেছিল। ললিতা, তুমি সেতার বাজাইতে শিখিলে কবে?” “আমিত সেতার বাজাইতে জানি না!” “বজরায় কেমন করিয়া বাজাইতেছিলে?” “বজ্‌রা? কোথায় বজ্‌রা?” “তবে কি সমস্তই স্বপ্ন?”

 আহত যুবকের ক্ষীণ মানসিক শক্তি এই কঠিন সমস্যা পূরণ করিতে পারিল না। যুবক চক্ষু মুদ্রিত করিল; তাহার কর্ণে শত ভ্রমরগুঞ্জন শব্দ বাজিতে লাগিল, সে ক্রমে অচেতন হইয়া পড়িল। অর্দ্ধদণ্ড পরে যখন ময়ূখের চেতনা ফিরিল, তখনও ললিতা তাহার শিয়রে বসিয়া ব্যজন করিতেছিলেন। ময়ূখ চক্ষু মেলিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “ললিতা, আমি কি ঘুমাইয়া ছিলাম?” ললিত কহিলেন, “হাঁ।” “কতক্ষণ ঘুমাইয়াছিলাম?” “প্রায় অর্দ্ধদণ্ড।” “ললিতা, আমরা কোথায় আসিয়াছি? এ কি ভীমেশ্বর না গৌরীপুর?”

 ভীমেশ্বর! গৌরীপুর!! ললিতার স্মৃতিপটের সন্মুখ হইতে যবনিকা আরও কিঞ্চিৎ সরিয়া গেল। ভীমেশ্বর, গৌরীপুর, কলনাদিনী জাহ্নবী, জীর্ণ পুরাতন ঘাট, সর্ব্বনাশ।