দেখিতে পাইলে? বৈষ্ণব, আমি ব্রাহ্মণ নহি, আমি চণ্ডাল, যেখানে চলিয়াছি সেখানে জাতিভেদ নাই, কুলমর্য্যাদা নাই। যাহা দেখিতেছ আমাকে একবার দেখাও।” বৈরাগী আবেগরুদ্ধ কণ্ঠে কহিল, “দেখ, তুমিও দেখ।”
তখন ব্রাহ্মণের নয়নপথে ছায়ারূপ যেন সহসা শরীরী হইয়া উঠিল, অন্ধকারময় কক্ষের এক কোণ উজ্জ্বল শুভ্র আলোকে উদ্ভাসিত হইয়া উঠিল, সেই ছায়ারূপ ক্রমে ক্রমে সুন্দর সুগঠিত শ্যামরূপ ধারণ করিল; রাধাবিনোদ বলিতে বৈষ্ণবে যাহা বুঝে ছায়া সেই শরীর ধারণ করিয়া ব্রাহ্মণ ও বৈষ্ণবের মানসচক্ষুর সম্মুখে আসিয়া দাঁড়াইল। ব্রাহ্মণের মুদ্রিত নয়নের কোণে অশ্রুধারা প্রবাহিত হইল; তাহা দেখিয়া পাদ্রী ও তাহার অনুচরদ্বয় বিস্মিত ও স্তম্ভিত হইয়া রহিল।
সেই সময়ে আর একজন ফিরিঙ্গি যুবা সেই অন্ধকারময় কক্ষে প্রবেশ করিয়া ডাকিল, “আলভারেজ্!” পাদ্রী ব্যস্ত হইয়া কক্ষের দুয়ারে গিয়া দাঁড়াইল। যুবা তাহাকে কহিল, “তোমার রক্তপিপাসা কি এখনও মিটে নাই? তুমি আমার আদেশ না লইয়া বন্দীদিগকে কেন কারাগার হইতে লইয়া আসিয়াছ?” পাদ্রী লজ্জিত হইয়া কহিল, “পৌত্তলিক-দলনে পুরোহিতের আদেশই গ্রাহ্য, তাহার জন্য যে শাসনকর্ত্তার আদেশ লইতে হয় তাহা জানিতাম না।”
“তুমি কি বন্দীদিগকে যন্ত্রণা দিতে আরম্ভ করিয়াছ?”