পাতা:মরণের ডঙ্কাবাজে - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

মরণের ডঙ্কা বাজে

সঙ্গে সঙ্গে জাহাজের সাইরেন্ বেজে উঠল, রয়েল মেলের নিশান উঠিয়ে দেওয়া হ'ল মাস্তুলে। সন্ধ্যাকাশ তখনও যেন লাল। সান্ধ্য তারার সঙ্গে চাঁদ উঠছে পশ্চিমাকাশে― ইরাবতী বক্ষে চাঁদের ছায়া পড়েচে।

 জাহাজ কিছুদূর গিয়ে নোঙর ফেললে। রাত্রে ইরাবতী নদীতে বড় জাহাজ চালানোর নিয়ম নেই। রেঙ্গুনের পাইলট রাত্রে জাহাজে থাকবে ও সকালে ইরাবতী বক্ষে জাহাজ চালিয়ে নিয়ে যাবে।

 ভোর বেলায় কেবিন থেকে ঘুম চোখে বেরিয়ে এসে সুরেশ্বর দেখলে জাহাজ চলেচে ইরাবতীর দুই তীরের সমতল ভূমি ও ধানক্ষেতের মধ্যে দিয়ে। যতদূর চোখ যায় নিম্ন বঙ্গের মত শস্যশ্যামলা ঘন সবুজ ভূমি, কাঠের ঘরবাড়ী। তার পরেই রেঙ্গুন পৌঁছে গেল জাহাজ।

 সুরেশ্বর বা বিমল কেউই রেঙ্গুনে নামবে না। সুরেশ্বরের রেঙ্গুনে কাজ আছে বটে কিন্তু সে ফিরবার মুখে। ওরা দুজনেই এ জাহাজ থেকে সিঙ্গাপুরগামী জাহাজে ওদের জিনিসপত্র রেখে বেড়াতে বেরুল।

 বেশী কিছু দেখবার সময় নাই। দুপুরের পরেই সিঙ্গাপুরের জাহাজ ছাড়বে, জাহাজের “পার্সার” বলে দিলে বেলা সাড়ে বারোটার আগেই ফিরে আসতে।

 নতুন দেশ, নতুন মানুষের ভিড়। ওরা যা কিছু দেখচে, বেশ লাগচে ওদের চোখে। লেক, পার্ক ও সোয়েডাগং প্যাগোডা দেখে ওরা জাহাজে ফিরবার কিছু পরেই জাহাজ ছেড়ে দিলে।

 আবার অকূল সমুদ্রের অনন্ত জলরাশি।