পাতা:মরণের ডঙ্কাবাজে - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

মরণের ডঙ্কা বাজে

 ওর বুক ঢিপ্ ঢিপ্ করছে। যদি জাপানীরা তাকে এখন ধরে, তবে এখুনি গুলি করে মারবে। কিন্তু ওদের হাতে বন্দী হয়ে এভাবে থাকার চেয়ে মৃত্যুপণ করেও মুক্তির চেষ্টা তাকে করতে হবে।

 স্মৃতিস্তম্ভটার গায়ে একটা ডোবা। অন্ধকারের মধ্যেও মনে হোল ডোবাটায় বেশ জল আছে। বিমল ডোবার জলে তাড়াতাড়ি নামলো― তার কেমন মনে হোল জলে নেমে সে যদি গলা ডুবিয়ে থাকে, তবেই সব চেয়ে নিরাপদ― ডাঙ্গায় ছুটে পালাবার চেষ্টা করলে বেশীদূর যেতে না যেতেই সে ধরা পড়বে।

 এই ডোবায় নামবার জন্যেই যে এ যাত্রা বেঁচে গেল― সেটা সে খানিকটা পরেই বুঝতে পারলে।

 অল্পক্ষণ― বোধ হয় দশ বারো মিনিটের পরেই ভীষণ চীৎকার ও বহু রাইফেলের সম্মিলিত আওয়াজ শোনা গেল। খুব একটা হৈ চৈ দুপ্ দাপ্, পালানোর শব্দ, আবার চেঁচামেচি― একটা ঘোর বিশৃঙ্খলার ভাব।

 বিমল তখন ডোবার জলে গলা ডুবিয়ে বসে আছে। যদি ডাঙ্গায় থাকতো তবে অন্ধকারে ছুটন্ত রাইফেলের গুলিতে হয়তো তার প্রাণ যেতো।

 ব্যাপারটা কি? বিমল দেখলে সেই জাপানী কামানের গাড়ীটা ঘিরে একটা খণ্ডযুদ্ধ ও হাতাহাতি আরম্ভ হয়েছে সহমরণের স্মৃতিস্তম্ভটার ওপরে। হ্যাণ্ড গ্রিনেড ফাটবার ভীষণ আওয়াজে হঠাৎ সমস্ত জায়গাটা যেন কেঁপে উঠলো। একটা―দুটো―তিনটে। জাপানী কামানের গাড়ীর কাছ থেকে জাপানী সৈন্যেরা হটে যাচ্ছে একটা বাগানের দিকে।

 বিমল এবার ব্যাপারটা কিছু কিছু বুঝলে। চীন সৈন্যের একটা দল জাপানীদের অতর্কিতে আক্রমণ করেছে। জাপানীরা ফিল্ড গানগুলো