পাতা:মরণের ডঙ্কাবাজে - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মরণের ডঙ্কা বাজে

 ক্রমশঃ এ জীবন সুরেশ্বরের অসহ্য হয়ে উঠল। সে ঠিক করলে কলকাতায় এসে টুইশানি করেও যদি চালায়, তবুও তো সহরে সে থাকতে পারবে এখন।

 আজ মাস পাঁচ ছয় আগে সুরেশ্বর কলকাতায় আসে এবং দেশের একজন পরিচিত লোকের মেসে ওঠে। এতদিন এক আধটা টুইশানি করেই চালাচ্ছিল, সম্প্রতি এই চাকুরিটা পেয়েচে, তারই এক ছাত্রের পিতার সাহায্যে ও সুপারিশে। সঙ্গে তিন বাক্স ঔষধ পত্রের নমুনা আছে বলে তাদের ফার্ম্মের মোটর গাড়ী ওকে চাঁদপাল ঘাটে পৌছে দিয়ে গিয়েছিল।

 এই প্রথম চাকুরী এবং এই প্রথম দূর বিদেশে যাওয়া― সুরেশ্বরের মনে খানিকটা আনন্দ ও খানিকটা বিষাদ মেশানো এক অদ্ভুত ভাব। একদল মানুষ আছে, যারা অজানা দূর বিদেশে নতুন নতুন বিপদের সামনে পড়বার সুযোগ পেলে নেচে ওঠে― সুরেশ্বর ঠিক সে দলের নয়। সে নিতান্তই ঘরকুণো ও নিরীহ ধরণের মানুষ― তার মত লোক নিরাপদে চাকুরী করে আর দশজন বাঙালী ভদ্রলোকের মত নির্ব্বিঘ্নে সংসার ধর্ম্ম পালন করতে পারলে সুখী হয়।

 তাকে যে বিদেশে যেতে হচ্ছে― তাও যে সে বিদেশ নয়, সমুদ্র পারের দেশে পাড়ি দিতে হচ্ছে— সে নিতান্তই দায়ে পড়ে। নইলে চাকুরী থাকে না। সে চায়নি এবং ভেবেও রেখেছে এইবার নিরাপদে ফিরে আসতে পারলে অন্য চাকুরীর চেষ্টা করবে।

 কিন্তু জাহাজ ছাড়বার পরে সুরেশ্বরের মন্দ লাগছিল না। ধীরে ধীরে বোটানিকাল গার্ডেন, দুই-তীরব্যাপী কল কারখানা