পাতা:মরণের ডঙ্কাবাজে - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

মরণের ডঙ্কা বাজে

 ― না, আর যারা যাচ্ছেন― সবাই ডেকে। একজন কেবল ফার্ষ্ট ক্লাসের যাত্রী। আপনি কতদূর যাবেন― রেঙ্গুনে?

 ― আপাততঃ তাই বটে— সেখানে থেকে যাবো সিঙ্গাপুর।

 — বেশ, বেশ, খুব ভাল হোল।

 আমিও তাই, সরে এসে বসুন এদিকে, আপনার সঙ্গে একটু ভাল করে আলাপ জমিয়ে নিই। বাঁচলুম আপনাকে পেয়ে।

 সুরেশ্বর শীঘ্রই তার সঙ্গীটির বিষয়ে তার নিজেরই মুখে অনেক কথা শুনলে। ওর নাম বিমলচন্দ্র বসু, সম্প্রতি মেডিক্যাল কলেজ থেকে পাশ করে বেরিয়ে ডাক্তারী করবার চেষ্টায় সিঙ্গাপুর যাচ্ছে। বিমলের বাড়ী কলকাতায়, ওদের অবস্থা বেশ ভালই। সিঙ্গাপুরে ওদের পাড়ার এক ভদ্রলোকের বন্ধু ব্যবসা করেন, তার নামে বিমল চিঠি নিয়ে যাচ্ছে।

 কথাবার্ত্তা শুনে সুরেশ্বরের মনে হোল বিমল অত্যন্ত বুদ্ধিমান ও সাহসী। নতুন দেশে নতুন জীবনের মধ্যে যাবার আনন্দেই সে মশ্গুল। সে বেশ সবল যুবকও বটে। অবশ্যি সুরেশ্বর নিজেও গায়ে ভালই শক্তি ধরে; এক সময়ে সে রীতিমত ব্যায়াম ও কুস্তি করতো, তারপর গ্রামে অনেকদিন থাকার সময়ে সে মাটি কোপানো, কাঠ-কাটা প্রভৃতি সংসারের কাজ নিজের হাতে করতো বলে হাত-পা যথেষ্ট শক্ত ও কর্ম্মক্ষম।

 ক্রমে বেলা বেশ পড়ে এল। সুরেশ্বর ও বিমল ডেকে বসে নানারূপ গল্প করচে। ঘড়ির দিকে চেয়ে হঠাৎ বিমল বল্লে― আমি একবার কেবিন থেকে আসি, আপনি বসুন। ডায়মণ্ড হারবার ছাড়িয়েচে এখুনি পাইলট নেমে যাবে। আমার চিঠিপত্র দিতে হবে ওর সঙ্গে। আপনি যদি চিঠিপত্র দেন তবে এই বেলা লিখে রাখুন।