পাতা:মরণের ডঙ্কাবাজে - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

মরণের ডঙ্কা বাজে

 সাগর পয়েণ্টের বাতিঘর দূর থেকে দেখা যাওয়ার কিছু আগেই কলকাতা বন্দরের পাইলট জাহাজ থেকে নেমে একখানা ষ্টীমলঞ্চে কলকাতার দিকে চলে গেল।

 সাগর পয়েণ্ট ছাড়িয়ে কিছু পরেই সমুদ্র― কোনো দিকে ডাঙা দেখা যায় না― ঈষৎ ঘোলা ও পাট্কিলে রঙের জলরাশি চারিধারে। সন্ধ্যা হয়েচে, সাগর পয়েণ্টের বাতিঘরে আলো ঘুরে ঘুরে জ্বলচে, কতকগুলো সাদা গাংচিল জাহাজের বেতারের মাস্তুলের ওপর উড়চে। ঠাণ্ডা হাওয়ায় শীত করচে বলে বিমল কেবিন থেকে ওভার-কেটটা আনতে গেল, সুরেশ্বর ডেকে বসে রইল।

 জ্যোৎস্না রাত। ডেকের রেলিংএর ধারে চাঁদের আলো এসে পড়েচে, সুরেশ্বরের মন এই সন্ধ্যায় খুবই খারাপ হয়ে গেল হঠাৎ বাড়ীর কথা ভেবে, বৃদ্ধ বাপ মায়ের কথা ভেবে, আসবার সময়ে বোন্ প্রভার অশ্রুসজল করুণ মুখখানির কথা ভেবে।

 পুর্ব্বেই বলেছি সুরেশ্বর নিরীহ প্রকৃতির ঘরোয়া ধরণের লোক। বিদেশে যাচ্ছে তার নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে, চাকুরীর খাতিরে। বিমল যদিও সুরেশ্বরের মত ঘরকুণো নয়, তবুও তার সিঙ্গাপুরে যাবার মধ্যে কোনো দুঃসাহসিক প্রচেষ্টা ছিল না। সে চিঠি নিয়ে যাচ্ছে পরিচিত বঁন্ধুর নিকট থেকে সেখানকার লোকের নামে, তারা ওকে সন্ধান বলে দেবে, পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করবে। তারপর বিমল সেখানে একখানা বাড়ী ভাড়া নিয়ে গেটের গায়ে নাম-খোদাই পেতলের পাত বসিয়ে শান্ত ও সুবোধ বালকের মত ডাক্তারী আরম্ভ করে দেবে― এই ছিল তার মতলব। যেমন পাঁচজনে দেশে বাস করচে, সে না হয় গিয়ে করবে সিঙ্গাপুরে।