পাতা:মহর্ষি মনসুর - মোজাম্মেল হক.pdf/২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভূমিকা শাহ কে অদ্বৈতবাদ সম্বন্ধীয় এমন একটী কঠিন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেন যে, তদুত্তরে গুরুকে বলিতে হইল,—“মনসুর ; সাবধান, রসনাকে শাসনে রাখিও । নতুবা, আমি দিব্য চক্ষে দেখিতেছি, কোন দিন তুমি রাজাজ্ঞায় প্রাণ হারাইবে ।” গুরুর নিকট উৎসাহ না পাইয়া মনসুর নিৰ্জন প্রদেশে যোগাবলম্বন করত সমাধিস্থ হইলেন । কয়েক বৎসর তিনি যোগাসনে ধ্যানস্তিমিতনেত্ৰে নীরব নিম্পন্দভাবে বাহাজ্ঞান শূন্যাবস্থায় থাকিয়া হঠাৎ এক দিন প্রেমের পূৰ্ণ আবেশে অস্থির হইয়া উচ্চৈঃস্বরে বলিয়া উঠিলেন ,—“আনাল হক্‌” ( অহম ব্ৰহ্মাদি ) । এই সংবাদ বাগদাদের চতুৰ্দ্দিকে বিদুদ্বেগে ছড়াইয়া পড়িল ; আবালবৃদ্ধবনিতা এক মুখে বলিতে লাগিল,-“কি স্পৰ্দ্ধার কথা । ক্ষুদ্ৰ মানব হইয়া ঈশ্বরত্বের অধিকার । ভক্তের কি এই উক্তি ? ইহা নিশ্চয় বাতুলের প্রলাপ ; মনসুর নিঃসন্দেহ পাগল হইয়াচেন ।” মনসুর যাহা প্রচার করিয়াছিলেন, সাধারণে তাহা বুঝিবে কি প্রকারে ? এত বড় একটা দাৰ্শনিক সত্য তখনকার বাগদাদী লোকের পক্ষে অবোধ্য হওয়াতে তত দোষের হয় নাই । কিন্তু আধুনিক উচ্চ শিক্ষিত ব্যক্তিগণের মধ্যেই বা কয় জন সেই অহম্ ব্ৰহ্মামি’ মহাবাক্যের অৰ্থ উপলব্ধি করিতে পারেন ? সাধারণভাবে জীবাত্মা ও পরমাত্মার প্ৰভেদ সকল ধৰ্ম্মসম্প্ৰদায়ই প্রচার করিয়া থাকেন এবং সকলে উহা মোটামুটি বুঝিতেও পারেন । ‘তত্ত্বমসি’ মহাবাক্যের গুঢ়াৰ্থ উন্নত দাৰ্শনিক ব্যতীত অার কাহারও বোধগম্য হইতে পারে না। । সাধারণ লোকে যদি বুঝিতে চায়, তবে তাহাদের ‘ইতঃভ্ৰষ্টস্ততোনষ্টঃ’ হইয়া থাকে । এই জন্যই বুঝি, ভারতের তত্ত্বজ্ঞানিগণ মুখকে ব্ৰহ্মজ্ঞান দিতে ভূয়ো-ভূয়ঃ নিষেধ করিয়া গিয়াছেন। মন্‌সুরের গুরু জুনেদও এই গভীর দাৰ্শনিক সত্য সাধারণ্যে প্রচার করিতে মনসুরকে বারংবার