পাতা:মহর্ষি মনসুর - মোজাম্মেল হক.pdf/২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভূমিকা কাহার কথা শোনে ? মনসুর অনবরত এক ধ্যানে ‘অনাল হক্‌’ প্রচার করিতে লাগিলেন । সিন্ধুতে বিন্দু মিশাইয়া গেলে এক ৰূপ হয়, পরন্তু বিন্দু মধ্যে সিন্ধু প্ৰবেশ করিলে বিন্দু আপনাকে স্থির রাখিতে পারে কি না, ইহা ভাবুক জনের ভাবিবার বিষয় । এই জন্য কোন মহাপুৰুষ বলিয়া গিয়াছেন, “বুদ সমূহানা সমন্দর মে, সো মানে সব কোই, সমন্দর সম্হানা বুদ মে, পহুছে বিরলা কোই ?” যাহা হউক, মন্‌সুরের ব্যবহারে সাধারণ মুসলমান-সমাজ একেবারে ক্ৰোধে উন্মত্ত হইলেন । তাহাদের দৃঢ় বিশ্বাস, খোদা-তা’লা ‘হফত তবক্‌’ অসমানের উপর পবিত্ৰ সিংহাসনে চির-বিরাজ করিতেছেন । মন্‌সুর কি প্রকারে তঁাহার পদে বসিতে পারেন ? অতএব মনসুর ঈশ্বরদ্রোহী, সুতরাং প্ৰাণদণ্ডাহঁ । পরমাত্মা স্ৰষ্টা, জীবাত্মা সৃষ্ট ; পরমাত্মা মহান, জীবাত্মা অণুবৎ। জীবাত্মা পরমাত্মা হইতে সম্পূৰ্ণ পৃথক, পরমাত্মার অধীন তাহাকে চিরদিনই থাকিতে হইবে । ইহাই ইসলামের সাধারণ শিক্ষা । এরুপ স্থলে যদি কেহ ‘অহম্ ব্ৰহ্মান্নি’ প্রচার করিতে প্ৰবৃত্ত হয়, তাহা হইলে উক্ত শ্রেণীর লোকেরা তাহাকে ঘোর অপরাধী মহাপাপী মনে করিয়া রাজদ্বারে অভিযুক্ত করিতে বাধ্য। মন্‌স্বরের অদৃষ্ট তাহাই ঘটিয়াছিল । সাধারণ প্ৰকৃতিবৰ্গ খলিফার নিকট বারংবার বিচারপ্ৰাৰ্থী হইয়াছিল। কিন্তু মন্‌স্বরের ন্যায় বৈরাগী দরবেশের প্রতি কোন দণ্ডবিধান করা তঁহার পক্ষে অসঙ্গত বিবেচনা করিয়া তিনি সৰ্ব্বজনপূজ্য ধৰ্ম্মাত্মা শাহ জুনেদের নিকট ব্যবস্থা প্ৰাৰ্থনা করেন। জুনোদ শাহ, অনেকবার প্রত্যাখ্যানের পর শেষে নিতান্ত অনিচ্ছায় মনসুর প্রাণদণ্ডাহঁ বলিয়া ব্যবস্থা প্ৰদান করেন ।