পাতা:মহাত্মা গান্ধীর কারাকাহিনী - অনাথ নাথ বসু.pdf/১৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১০
কারাকহিনী।

চারী আসিলে টুপি উত্তোলন করিয়া অভিবাদন করিতে হইত। সকলেরই নিকট ইংরাজী টুপি ছিল সুতরাং সেগুলি উত্তোলন করার অসুবিধা বিশেষ কিছু ছিল না। টুপি তোলা শুধু যে কায়দামাফিক তা’ নয়, উচিত ও বটে। যখন কোন পর্যবেক্ষক আসিতেন তখন “ফল্ ইন্” (fall in) করিবার আদেশ দেওয়া হইত। আমার কানে এই শব্দটী একান্ত পরিচিত হইয়া উঠিয়াছিল। এই শব্দের অর্থ—ঠিক ভাবে এক পংক্তিতে দাঁড়াইয়া থাক। প্রতিদিন চার পাঁচ বার এরূপ হইত। একটী কর্মচারী— তাঁহাকে নায়েব দারোগা বলা হইত —একটু জবরদস্ত ছিলেন; তাই ভারতবাসীগণ তাঁহার নাম রাখিয়াছিলেন, জেনারেল স্মাট‍্স্......। প্রভাতে তিনি কতদিন খুব সকালে নীরবে আসিয়া পড়িতেন, মাঝে মাঝে সন্ধ্যার সময়ও একবার ঘুরিয়া যাইতেন। সকালে সাড়ে নয়টার সময় ডাক্তার আসিতেন, তিনি খুব দয়ালু ও ভাল লোক ছিলেন। সর্ব্বদাই খুব সহৃদয় ভাবে কুশল প্রশ্ন করিতেন। জেলের নিয়মানুযায়ী প্রথম দিন প্রত্যেক কয়েদীকে একেবারে উলঙ্গ হইয়া ডাক্তারকে আপনার শরীর দেখাইতে হইত, কিন্তু তিনি আমাদের প্রতি এ নিয়ম চালাইলেন না। যখন ভারতীয় কয়েদির সংখ্যা বেশী হইয়া উঠিল তখন বলিলেন যে যদি কাহারও চুলকানি বা পাঁচড়া ইত্যাদি হইয়া থাকে তবে তাঁহাকে যেন জানান হয়, তাহা হইলে তিনি তাহাকে একান্তে লইয়া গিয়া দেখিবেন।

 সাড়ে দশটা এগারটার সময় গভর্ণর ও প্রধান দারোগা আসিতেন। গভর্ণর খুব উপযুক্ত ন্যায়শীল ও শান্ত স্বভাব ছিলেন। তিনি সর্ব্বদাই এক প্রশ্ন করিতেন—তোমরা সকলে ভাল আছ তো? তোমাদের কোন্ জিনিষ দরকার? তোমাদের কোন নালিশ ত নাই? যদি কেহ কোন বিষয় অভিযোগ করিত বা কিছু চাইত, তবে খুব মনোযোগ সহকারে শুনিতেন এবং যতদূর সম্ভব তাহার ইচ্ছা পূর্ণ করিতেন। যে অভিযোগ তিনি সত্য