পাতা:মহাত্মা গান্ধীর কারাকাহিনী - অনাথ নাথ বসু.pdf/২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
কারাকাহিনী।
২৩

আনন্দের সহিত সন্ধ্যাবেলায় আমাদিগকে ড্রিল শিখাইতেন। ইহাতে খুব লাভ হইত। ড্রিল শিখাইবার ব্যবস্থা বেশী দিন স্থায়ী হইলে আমাদের সকলের অনেক উপকার হইত। কিন্তু ভারতীয় কয়েদীর সংখ্যা বৃদ্ধি হইলে দারোগার কাজও বাড়িয়া গেল, বারান্দার যায়গাও কম হইল, এইজন্য ড্রিল করা বন্ধ হইল। তথাপি মিঃ নবাব খাঁ সঙ্গে ছিলেন, এই কারণে ঘরোয়া ভাবে তাঁহার নিকটেই ড্রিল শিক্ষা হইত। ইহা ছাড়া গভর্ণরের পরোয়ানা অনুসারে আমরা সেলাইয়ের কল চালাইবার কাজও আরম্ভ করিয়াছিলাম। আমরা কয়েদীদের ঝুলি বানাইতে শিখিয়াছিলাম। মিঃ টী, নায়ডু এবং মিঃ ইষ্টণ এই কর্ম্মে নিপুণ ছিলেন তাই তাঁহারা তাড়াতাড়ি শিখিয়া লইয়াছিলেন। কিন্তু আমি তেমন দক্ষতা লাভ করিতে পারি নাই, আমি ভাল করিয়া শিখিতে পাই নাই। একবার অনেক কয়েদী আসিয়া পড়িল, কাজের ভাগও অর্দ্ধেক কমিয়া গেল। ইহা হইতে পাঠক বুঝিতে পারিবেন মানুষ ইচ্ছা করিলে “জঙ্গলে মঙ্গল” অর্থাৎ বনে বসিয়াও ভাল কাজ করিতে পারে। এইরূপে এক কাজের পর অন্য কাজে হাত দিতে থাকিলে কোন কয়েদীরই জেলের ‘সময় কাটে না’ বলিয়া মনে হইবে না, এমন কি সে নিজের জ্ঞান ও শক্তি বৃদ্ধি করিয়া সেখান হইতে বাহির হইতে পারিরে। অনেক দৃষ্টান্ত দেখা গিয়াছে, জেলখানায় ভাগ্যবান লোকে অনেক বড় বড় কাজ করিয়া সারিয়াছেন। জন বানিয়ান গুরুতর কারাক্লেশ সহ্য করিয়া জগতে অমর গ্রন্থ “পিলগ্রীমস্ প্রগ্রেস্ বা যাত্রিকের গতি” লিখিয়া গিয়াছেন। ইংরাজেরা বাইবেলের পরে এই গ্রন্থেরই সমধিক আদর করে। লোকমান্য তিলক যখন বোম্বাইতে নয় মাসের কারাদণ্ড ভোগ করিতে ছিলেন তখনই “ওরায়ন” নামক পুস্তক লিখিয়াছিলেন। সুতরাং জেলেই হউক আর অন্যত্রই হউক, সুখ মিলিবে কি দুঃখ মিলিবে, সুস্থ থাকিবে কি