পাতা:মহাত্মা গান্ধীর কারাকাহিনী - অনাথ নাথ বসু.pdf/৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
কারাকাহিনী।
৩৩

তরকারী দেওয়া হইত না, সন্ধ্যায় দুই দিন সবজী ও ‘পূপূ’ পাওয়া যাইত, তিন দিন বীন্, একদিন আলু ও ‘পূপূ’।

 এই আহার নিজেদের রীতি অনুযায়ী না হইলেও সাধারণ ভাবে ইহাকে মন্দ বলা চলে না। অনেক ভারতবাসীর, ‘পূপূ’ ভাল লাগিত না, এবং তাঁহারা ইচ্ছা করিয়াই থাইতেন না। কিন্তু আমার মনে হয় এটা খুব ভূল। ‘পূপূ’ মিঠা ও পুষ্টিকর খাদ্য। গমের পরিবর্ত্তে উহাকে এদেশে ব্যবহার করা যাইতে পারে, তাহাতে আবার চিনি দিলে চমৎকার স্বাদ হয়। কিন্তু বিনা চিনিতেও ক্ষুধা থাকিলে খুবই মিষ্ট লাগে। ‘পূপূ’ খাওয়ার অভ্যাস থাকিলে, পূর্ব্বোক্ত ভোজনে আর কেহ অতৃপ্ত থাকে না, সকলেরই ক্ষুধা নিবারণ হয়। শুধু তাহাই নহে, তাহাতে শরীরও হৃষ্টপুষ্ট হয়, সামান্য কিছু পরিবর্ত্তন করিয়া নিলে ইহাতেই ভরপেট খাওয়া হয়। দুঃখের বিষয় ত ইহাই যে, আমরা এরূপ বাবু হইয়া উঠিয়াছি এবং আমাদের অভ্যাস এরূপ হইয়া গিয়াছে যে যদি কোথাও নিজেদের অভ্যাসমত খাবার না জুটিল ত মেজাজ গেল বিগড়াইয়া। বোক‍্সরষ্ট জেলে আমার এই অভিজ্ঞতা হইল; ইহাতে মনে বড় ব্যথা পাইলাম। ভোজন লইয়া বিবাদ ত সর্ব্বদা উঠিত, আর “অন্নই জীবন নহে, খাওয়ার জন্য বাঁচিয়া আছি এমনও নহে” —এরূপ কথা প্রায়ই হইত। সত্যাগ্রহীদের এরূপ গণ্ডগোল করা উচিত নহে; আহার পরিবর্ত্তন করা নিজের কাজ। পরিবর্ত্তন না হইলে যাহা পাওয়া যায় তাঁহাতেই সন্তুষ্ট থাকিয়া গবর্ণমেণ্টকে দেখান চাই যে আমরা কোনও ক্ষেত্রেই পরাজয় স্বীকার করিবার পাত্র নহি। ইহাই আমাদের কর্তব্য। অনেক ভারতবাসীই খাদ্যের অসুবিধার জন্যই জেলে যাইতে ভয় পান। তাঁহাদের উচিত, বিচারপূর্ব্বক আপনাদের ভোজনলালসা সংযত করা।