পাতা:মহাত্মা গান্ধীর কারাকাহিনী - অনাথ নাথ বসু.pdf/৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
কারাকাহিনী।
৪১

 এই কাজ ছাড়াও, প্রত্যেক কুঠুরিতে প্রস্রাবের জন্য যে পাত্র ছিল তাহা উঠাইয়া আনিবার ভার আমাদের উপর পড়িয়াছিল। দেখিলাম, অনেকে একাজ করিতে ঘৃণা বোধ করেন। কিন্তু বাস্তবিক, ইহাতে ঘৃণা করিবার কিছু নাই। কাজ করিতে গিয়া লজ্জা বা ঘুণা বোধ করা ভুল। বিশেষ করিয়া কয়েদীর ত বিরক্তির অবকাশই নাই। প্রায়ই দেখিতাম, কুঠুরীর প্রস্রাবের পাত্র কে উঠাইবে তাহা লইয়া কথা উঠিত। যদি সত্যাগ্রহ আন্দোলনের মূল কথা আমার নিকট পরিষ্কার হইয়া গিয়া থাকে তবে আর এ প্রশ্ন উঠে না, বরং কে একাজ করিবে তাহা লইয়া কাড়াকাড়ি পড়ে। যাহার উপর এই কাজের ভার পড়ে, তাহার নিজকে ধন্য মনে করা উচিত; অর্থাৎ এমন হওয়া উচিত যে, গবর্ণমেণ্ট জেলে আমায় এমন কাজ করিতে দিলে তাহাতে আমাদের মান সম্রমের কিছু হইবে না, বরং গবর্ণমেণ্টের বলার আগেই সে কাজ করিতে প্রস্তুত থাকা সব চেয়ে ভাল। যখন কষ্ট সহ্য করিতে প্রস্তুত আছি, তখন একজনকে অন্যের চেয়ে বেশী কষ্ট পাইবার জন্য প্রস্তুত হইয়া থাকিতে হইবে, এবং যাহার উপর সব চেয়ে বেশী কাজের ভার পড়িবে তাহার তাঁহাতে গৌরবই বোধ করিতে হইবে। মিঃ হাসান মির্জ্জা এই আদর্শ প্রচার করিলেন। তাঁহার ফুসফুসের রোগ ছিল, শরীরও বিশেষ দুর্ব্বল; তবু তাঁহাকে যখনই যে কাজ দেওয়া হইয়াছে সে কাজ তিনি খুসী হইয়া করিতেন। শুধু তাহাই নহে, নিজের রোগও তিনি গ্রাহ্য করিতেন না। একবার একজন কাফ্রি দারোগা তাঁহাকে বড় দারোগার পায়খানা পরিষ্কার করিতে বলিয়াছিল, তিনি তৎক্ষণাৎ সে কাজ করিতে স্বীকার করিলেন। পূর্ব্বে তিনি কখনও একাজ করেন নাই, তাই একাজ, করিতে করিতে তাঁহার বমি হইল, তবু তিনি পশ্চাৎপদ হইলেন না। যখন তিনি অন্য একটি পায়খানা পরিষ্কার করিতেছিলেন, তখন আমি সেখানে গিয়া পৌঁছিলাম; এ দৃশ্য দেখিয়া আমার মন প্রসন্ন হইয়া উঠিল,