পাতা:মহাত্মা গান্ধীর কারাকাহিনী - অনাথ নাথ বসু.pdf/৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
কারাকাহিনী।
৪৭



বাধাবিপত্তি

 দেখা গেল যে বাহিরের বিপদ অপেক্ষা ভিতরের বাধাগুলি বেশী কষ্ট দিতেছিল। মাঝে মাঝে সেখানেও হিন্দু মুসলমান, উচ্চ-নীচ জাতি ভেদের ভাব ফুটিয়া উঠিত। সেখানে সকল জাতির ও সকল শ্রেণীর ভারতবাসী ছিলেন। তাঁহাদের ব্যবহারেই বোঝা যাইত, আমরা স্বরাজ লাভের পথে কতখানি পিছনে পড়িয়া আছি; তবে এ কথাও দেখা গেল যে ইহাতে এমন কিছু নাই যাহাতে স্বরাজ সাধন অসম্ভব করিয়া তোলে; যাহা কিছু বাধা ঘটিতেছিল তাহা শেষাশেষি দূর হইয়া গেল।

 অনেক হিন্দু বলিতেন, তাহারা মুসলমানের বা অন্য হিন্দুর হাতে খাইবেন না; এরূপ যাঁহার বলেন, তাহাদের ভারতবর্যের বাহিরে যাওয়াই উচিত নয়। শ্বেতাঙ্গ বা কাফ্রি, যে কেহই খাবার স্পর্শ করুক না, তাহাতে ক্ষতি কি? একবার ত’ একজন বলিয়া বসিলেন, আমি চামারের কাছে শুইব না। এটাও আমাদের পক্ষে লজ্জার বিষয়। খোঁজ করার পরে জানা গেল, তাঁহার জাতিভেদ ভাব বিশেষ ছিল না, দেশে তাঁহার স্বজাতিরা শুনিয়া আপত্তি করিবে, এই ভাবিয়া শুধু তিনি এ কথা বলিয়াছিলেন। আমি জানি, এই ভাবে উচ্চ নীচ ভেদে ও স্বজাতির অত্যাচারে আমরা সত্য ভুলিয়া-অসত্যের আদর করিতেছি। যদি এ বোধ জাগিয়া ওঠে যে, চামারকে তিরস্কার করিবার কিছুই নাই, তখন স্বজাতির বা অন্য কাহারও অন্যায় অত্যাচারের ভয়ে সত্যকে ত্যাগ করিয়া কেমন করিয়া নিজকে সত্যাগ্রহী বলিয়া পরিচয় দিতে পারি? আমার ইচ্ছা হয়, যাঁহারা এই সংগ্রামে যোগদান করিবেন তাঁহার জাতি, পরিবার ও অ..র বিরোধ ঘুচাইয়া তবে যেন সত্যাগ্রহে যোগ দেন। এরূপ করি না বলিয়াই আমাদের আন্দোলন শিথিল হয়। এ কথা আমার সত্য বলিয়া