পাতা:মহাত্মা গান্ধীর কারাকাহিনী - অনাথ নাথ বসু.pdf/৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
কারাকাহিনী।
৫৯

(ভারতবর্ষের বিষয়ে) আমি পড়িয়া শেষ করিয়াছিলাম। রাস্কিন ও খোরোর প্রবন্ধাবলী স্থানে স্থানে সত্যাগ্রহের কথায় পূর্ণ। মিঃ দেওয়ান্ আমাদের জন্য গুজরাতী পুস্তক পাঠাইয়াছিলেন, তাহা ছাড়া প্রায় সদা সর্ব্বদা ভগবদ‍্গীতা তা পাঠ হইত। ইহার ফলে, সত্যাগ্রহ আমার হৃদয়ে স্পষ্ট হইয়া উঠিল, এবং বলিতে পারি যে জেলে এমন কিছু ছিল না যাহাতে আমার হৃদয়ে কোনও অস্থির ভাব আনিয়া দিতে পারিত।

 উপরে যাহা লিখিয়াছি তাহাতে দুই ভিন্ন ভাব মনে জাগিতে পারে:—

 প্রথমতঃ, মনে হইতে পারে, এই রকম জেলে বদ্ধ হওয়া, মোটা খদ্দর ও খারাপ কাপড় পরা, খারাপ খাদ্য খাওয়া, ক্ষুধায় মরা, দারোগার গালি খাওয়া, কাফ্রিদের সঙ্গে থাকা, পছন্দ হউক আর নাই হউক সকল কাজ করা; দারোগা হয়ত আমার ঢাকর হইতে পারিত, তাহার আদেশ সর্ব্বদা মানা, নিজের প্রিয় আত্মীয় স্বজনের সহিত দেখা সাক্ষাৎ করিতে না পারা, কাহাকেও চিঠি লিখিতে না পারা, প্রয়োজনীয় জিনিষপত্র না পাওয়া, খুনী এবং ডাকাতের সঙ্গে একত্র বাস করা,—এ সকল দুঃখ ভোগ কেন করিব? এর চেয়ে ত মৃত্যুও ভাল। জরিমানা দিয়া মুক্তি পাওয়া বরং ভাল, তবু জেলে যাওয়া ভাল নয়। ভগবান্ করুন, কাহারও যেন জেলে যাইতে না হয়।

 কিন্তু এই রকম চিন্তা মানুষকে দুর্ব্বল করিয়া ফেলে সে জেলকে ভয় পায়, এবং যে কল্যাণ সাধনের জন্য সে জেলে যায় তাহা অপূর্ণ থাকে।

 আর এক ভাব মনে জাগিতে পারে:—

 দেশহিতের জন্য, মানরক্ষার জন্য, ধর্মের জন্য যদি আমায় জেলে যাইতে হয় ত’ সে আমার সৌভাগ্য। জেলে দুঃখ কিসের? বাহিরে এখানে ত আমাকে অনেকের তাঁবেদারী করিতে হয়, জেলে শুধু দারোগার আদেশই মানিয়া চলিতে হয়। জেলে ত কিছুরই চিন্তা করিতে হয় না,—না