পাতা:মহাত্মা গান্ধীর কারাকাহিনী - অনাথ নাথ বসু.pdf/৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
কারাকাহিনী।
৬৩

চলিতে হইল। সঙ্গে ছিল দারোগা সন্ধ্যার ট্রেণে তৃতীয় শ্রেণীর গাড়ীতে তাহার সঙ্গে চলিলাম।

 অনেকেই এই ঘটনায় মনে করিল, ব্যাপার বুঝি মিটিবার উপক্রম হইতেছে; কেহ কেহ আবার মনে করিল, আমায় অন্যত্র লইয়া বেশী কষ্ট দেওয়ার ব্যবস্থাই হইবে; অনেকে ভাবিল,—সত্য মিথ্যা যাহাই হউক, এ বিষয়ে জন সাধারণের মধ্যে যাহাতে বিশেষ কোনও সভা সমিতি বা আন্দোলন না হয়, এই জন্যই আমাকে প্রিটোরিয়ায় রাখিয়া বেশী কষ্ট দেওয়ার জন্য লইয়া যাওয়া হইতেছে।

 বোক‍্সরষ্ট ছাড়িতে ইচ্ছা হইতেছিল না; সেখানে সারাদিন যেমন আনন্দে কাটাইতাম, রাত্রিতেও কথাবার্ত্তা বলিয়া, গল্প করিয়া, তেমনি আনন্দ পাইতাম। মিঃ হজুরা সিংহ ও মিঃ জোশী, এরা দুজনেই বেশ আসর জমাইতেন। তাঁহাদের কথাবার্ত্তাও নিরর্থক ছিল না, জ্ঞানধ্যানের কথায় তাঁহাদের মন সর্ব্বদা ভরপুর। যেখানে দিন রাত্রি এমন আনন্দে কাটিত, যেখানে এতগুলি ভারতবাসী একত্রে থাকিতেন, সে জায়গা ছাড়িতে কোন্ সত্যাগ্রহীর হৃদয়ই না ব্যথা পায়? কিন্তু মানুষের ইচ্ছামত কাজ হইলে ত কথাই ছিল না।

 চলিলাম; পথে মিঃ কাজীর সঙ্গে সাদরসম্ভাষণ শেষ করিয়া দারোগা ও আমি গাড়ীতে উঠিলাম। শীত পড়িতেছিল; সারারাত্রি বৃষ্টি হইল। আমি গায়ে চাদর জড়াইবার অনুমতি পাইলাম। তাহাতে কিছু আরাম বোধ হইল, শীত একটু কমিল। সঙ্গে ছিল রুটী ও পনির; আমিত’ খাওয়া সারিয়া বাহির হইয়াছিলাম, সুতরাং সেগুলি দারোগার কাজে লাগিল।