পাতা:মহাত্মা গান্ধীর কারাকাহিনী - অনাথ নাথ বসু.pdf/৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬৬
কারাকাহিনী।

 কোন ভারতবাসীর মুখদর্শন ত সেখানে ভাগ্যের কথা। সন্ধ্যার সময় কম্বল, চাদর ও পাতিবার অন্য মাদুর পাওয়া গেল—চৌকি টৌকি ছিল না। পায়খানায় পর্যন্ত দারোগা সঙ্গে যাইত। সে ত’ আমায় জানিত না, তাই বলিত, ‘হয়েছে, এইবার বাহিরে এস’ কিন্তু আমার যে বেশীক্ষণ বসিবার অভ্যাস, সেটা সে বুঝিত না। এখন উঠি কেমন করিয়া? উঠিলে কাজ শেষ হয় না। মাঝে মাঝে আবার দারোগা বা একজন কাফ্রি দাঁড়াইয়া ‘ওঠ্’ ‘ওঠ্’ বলিয়া চীৎকার করিতে থাকিত।

 দ্বিতীয় দিন কাজ পাওয়া গেল, তাহাও আবার মেঝে ও দরজা পরিষ্কার করিবার। দরজার উপর রং দেওয়া ছিল,—দরজা কিন্তু লোহার। তাহাকে আবার পালিশ করার কি প্রয়োজন, বুঝিলাম না। এক একটী দরজার পিছনে তিন তিন ঘণ্টা খাটিলাম কিন্তু কিছুই প্রভেদ দেখিলাম না। তবে মেঝেটার চেহারা কিছু ফিরিয়া গেল বটে। আমার সঙ্গে কাফ্রিরাও কাজ করিতেছিল, ভাঙ্গা ভাঙ্গা ইংরেজীতে নিজেদের দণ্ডবৃত্তান্ত বলিতেছিল,—এ দণ্ডভোগ আমার কেন, তাহাও জিজ্ঞাসা করিতেছিল। কেহ কেহ প্রশ্ন করিল, চুরী করিয়াছি কি না; কেহ আবার জিজ্ঞাসা করিতেছিল,—কি হে, মদ বিক্রয় করিতে আসিয়াছিলে না কি? তাহাদের কথাটা এক আধটু বুঝবার পর যখন তাহাদিগকে নিজেব কথা বললাম, তখন সকলেই পরামর্শ দিল,—“কোয়াইট রাইট্ (বেশ করিয়াছ), অমলু গুডে (গোরারা খারাপ লোক), ডোণ্ট্, পে ফাইন্ (জরিমানা দিও না)।” ইত্যাদি। আমার কুঠুরীর গায়ে লেখা ছিল—“আয়স্তে লেটেতু” বা সলিটারী সেল্। আমার পাশেই এমন ধারা আরও পাঁচটী কুঠুরী দেখিলাম। আমার প্রতিবেশী ছিল একজন কাফ্রি, সে খুন করিবার চেষ্টা করার অপরাধে অপরাধী। তাহার পিছনে আরও তিনজন কাফ্রি ছিল, তাহারা পাশবিক ব্যভিচার অপরাধে কারারুদ্ধ।