পাতা:মহাত্মা গান্ধীর কারাকাহিনী - অনাথ নাথ বসু.pdf/৮৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
কারাকাহিনী
৭৭

ভাষার বই ছিল; ইংরেজী পুস্তকগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য টলষ্টয়, এমার্সন ও কার্লাইলের গ্রন্থাবলী। প্রথম দুইখানি ধর্ম্মবিষয়ক, তাই এই সঙ্গে আমি জেলে বাইবেলও অনিয়াছিলাম। টলষ্টয়ের পুস্তকগুল এরূপ সরস ও সরল যে, যে কোনও ধর্ম্মাবলম্বী লোক সে গুলি পড়িয়া আনন্দ লাভ করিতে পারেন। তাহার বইগুলি পড়িয়া মনে হইত, তিনি যাহা লিখিয়া গিয়াছেন জীবনে তাহা নিশ্চয় পালন করিয়াছেন।

 কার্লাইলের, “ফ্রেঞ্চ রিভলিউশন”—ফরাসী বিপ্লব সম্বন্ধীয় পুস্তক পড়িতেছিলাম; বইখানি খুব জোরে লেখা। বইখানি পড়িয়াই মন হইয়াছিল, ভারতবর্ষের সমস্যা সমাধানের পন্থার ইউরোপীয় পন্থার সহিত খাপ খাইতে পারে না। আমার বিশ্বাস, বিপ্লবে ফরাসীদের বিশেষ কিছু লাভ হয় নাই। ম্যাট‍্সিনির মতও তাহাই। এ বিষয়ে যথেষ্ট মতভেদ আছে, এখানে সে বিচারের স্থান নাই। কিন্তু ইহাতেও কয়েকজন সত্যাগ্রহীর দৃষ্টান্ত পইেলাম। গুজরাতী, হিন্দী ও সংস্কৃত পুস্তকগুলির মধ্যে স্বামিজী, বেদশব্দসংজ্ঞা ও ভট্ট কেশবরামের উপনিষদ্ পাঠাইয়াছিলেন; মিঃ মোতিলাল দীবান মনুস্মৃতি পাঠাইয়াছিলেন; ফিনিক্সে ছাপা রামায়ণসার, পতঞ্জলিকৃত যোগসূত্র, নাথুরামকৃত আহ্নিক প্রকাশ, প্রোফেসর পরমানন্দ কর্তৃক দত্ত সান্ধ্যগীতা এবং স্বর্গীয় কবি রামচন্দ্রের কবিতাও পাইয়াছিলাম। এগুলির মধ্যে ভাবিবার অনেক কিছু পাইয়াছিলাম। উপনিষদ্ পাঠে শান্তিলাভ করিয়াছিলাম, তাহার একটি বাক্য—আমার হৃদয়ে চিরকাল অঙ্কিত থাকিবে,—তাহার মর্ম্ম “যাহা কিছুকর, সকলই আত্মার কল্যাণের জন্য করিও”। উপনিষদে আরও কত চিন্তার সামগ্রী পড়িয়াছিলাম। কিন্তু সব চেয়ে বড় আনন্দ পাইয়াছিলাম, কবি রামচন্দ্রের স্তবকপাঠে। আমার মতে তাঁহার রচনা সকলেরই আদরণীয়। টলষ্টয়ের মত তাঁহার আদর্শ ও মহান্। ইহা হইতে এবং সন্ধ্যার পুস্তক হইতে