পাতা:মহানপুরুষদের সান্নিধ্যে - শিবনাথ শাস্ত্রী.pdf/১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মহানপুরুষদের সন্নিধ্যে
পণ্ডিত বিদ্যাসাগর সপ্তাহে দুই তিন দিন আমাদের আবাসে আসিতেন, পিতা এবং মাতুলের সঙ্গে তাহার নিজের প্ৰিয় পরিকল্পনাগুলি নিয়া নানা আলোচনায় প্ৰবৃত্ত হইতেন । সে সময়ে ঐ আবাসে আমিই একমাত্র ক্ষুদ্র বালক । বিদ্যাসাগর মহাশয়ের দৃষ্টি তাই আমার উপর অতি সহজে পতিত হয় এবং আমি তাহার স্নেহ লাভে ধন্য হই । ক্রমে আমি তাহার এক অন্তরঙ্গ ও আদরের পাত্ররূপে পরিগণিত হইলাম ।
আমাদের গৃহে প্ৰবেশ করিয়া প্ৰথমেই তাঁহার কাজ ছিল আমাকে খুঁজিয়া বাহির করা। তারপর তিনি আদর করিয়া আমার গালে দুই একটি টোকা মারিয়া সোৎসাহে আমার পেটে দুই আঙ্গুল দিয়া অকস্মাৎ খোঁচা মারিয়া বসিতেন। সে বয়সে আমি আবার কিছুটা স্ফীতোদর ছিলাম। কখনো কখনো তিনি আমাকে ধরিয়া কিছু কিছু মিষ্ট দ্রব্যও হাতে গুঁজিয়া দিতেন। আমাদের গৃহে তাঁহার ঘন ঘন যাতায়াত যেমন ঘটিত, তেমনি বিধবা বিবাহ আন্দোলনের সমর্থনে তুমুল তর্কও কম হইত না । আর এইগুলি গলাধঃকরণ করিয়া আমি কলেজে গিয়াই তাহা উদগীরণ করিতাম। ফলে আমার সতীর্থ মহলে এক প্ৰচণ্ড বিতর্কের ঝড় বহিয়া যাইত ।
ইহার পর এই সমাজ সংস্কারের আন্দোলন বাস্তব রূপ পরিগ্রহ করে । ১৮৫৬ সালে বাবু রাজকৃষ্ণ ব্যানার্জ্জীর সুকিয়া ষ্ট্রীটের ভবনে প্ৰথম বিধবা বিবাহটি অনুষ্ঠিত হয়। সেদিনকার সেই স্মৃতিটুক আমার অন্তরে চিরউজ্জল হইয়া থাকিবে