পাতা:মহাভারত - উপক্রমণিকাভাগ - ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর.pdf/১৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৬০
মহাভারত।

তাঁহার বিদ্বেষ করে। অতএব আমি তপস্যা দ্বারা শরীর পরিত্যাগ করিব; বাসনা এই, যেন জন্মান্তরেও তাহাদের মুখাবলোকন করিতে না হয়।

 এইরূপ শেষবাক্য শ্রবণ করিয়া পিতামহ কহিলেন, বৎস! আমি তোমার ভ্রাতৃগণের আচরণের বিষয় সকলই জানি; আর মাতৃশাপে তাহাদের যে মহৎ ভয় উপস্থিত হইয়াছে, তাহাও জানি। কিন্তু পূর্ব্বেই সেই শাপের পরিহার করা আছে। অতএব ভ্রাতৃগণের নিমিত্ত তোমার খেদ করিবার আবশ্যকতা নাই। এক্ষণে তুমি আমার নিকট অভিলষিত বর প্রার্থনা কর, অদ্য আমি তোমাকে বর প্রদান করিব। আমি তোমাকে অত্যন্ত স্নেহ করি। সৌভাগ্যক্রমে তোমার বুদ্ধি ধর্ম্মপঞ্চবর্তিনী হইয়াছে। প্রার্থনা করি, উত্তরোত্তর তোমার ধর্ম্মে অচল মতি হউক। শেষ কহিলেন, হে পিতামহ! এই মাত্র বর প্রার্থনা করি, যেন আমার মতি শম, তপ ও ধর্ম্মে সতত রত থাকে। ব্রহ্মা কহিলেন, আমি তোমার শম দম দর্শনে সাতিশয় প্রীত হইয়াছি। এক্ষণে আমি তোমাকে এক অনুরোধ করিতেছি, প্রজাদিগের হিতার্থে তোমাকে তাহা রক্ষা করিতে হইবেক। তুমি অরণ্য, গিরি, সাগর, গ্রাম, নগরাদি সমেত এই বিচলিত পৃথিবীকে এ রূপে ধারণ কর, যেন উহা অচলা হয়। শেষ কহিলেন, হে বরদ! প্রজাপতে! মহীপতে! ভূতপতে! জগৎপতে। আপনার আজ্ঞা প্রমাণ, আমি পৃথিবীকে নিশ্চল। করিয়া ধারণ করিব, আপনি আমার মস্তকে ন্যস্ত করুন। ব্রহ্মা কহিলেন, হে ভুজগরাজ! পৃথিবী তোমাকে পথ দিযেন, তদ্বারা তুমি তাহার অধোভাগে গমন কর। তুমি পৃথিবীকে ধারণ করিলে, আমি পরম পরিতোষ পাইব।