পাতা:মহাভারত - উপক্রমণিকাভাগ - ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর.pdf/১৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আস্তীকপর্ব্ব।
১৭৫

না। ধর্ম্মপরায়ণ রাজারা আমাদের রক্ষা করেন, তাহাতেই আমরা নির্বিঘ্নে বহুলধর্ম্মোপাৰ্জন করি। সেই উপার্জিত ধর্ম্মে ধর্ম্মতঃ রাজাদিগের ভাগ আছে। অতএব রাজা কদাচিৎ অপরাধ করিলে ক্ষমা করাই কর্ত্তব্য। বিশেষতঃ, রাজা পরীক্ষিৎ স্বীয় পিতামহ পাণ্ডুর ন্যায় আমাদিগের রক্ষা করিতেছেন। প্রজাপালন রাজার পরম ধর্ম্ম। অদ্য সেই মহাত্মা ক্ষুধার্ত ওঁ শ্রান্ত হইয়া, আমার মৌনব্রতধারণের বিষয় না জানিয়াই, এই কর্ম্ম করিয়াছেন। দেশ অরাজক হইলে নিয়ত্ব দত্যুভয়াদি নানা দোষ জন্মে। লোক উদ্ধৃঙ্খল হইলে খাজা দণ্ডবিধান দ্বারা শাসন করেন। দগুভয়েই পুনর্বার শান্তি স্থাপন হয়। ভয়ে উদ্বিগ্ন হইলে কেহ ধর্ম্মানুষ্ঠান করিতে পারে না, ভয়ে উদ্বিগ্ন হইলে কেহ ক্রিয়ানুষ্ঠান করিতে পারে না। রাজা ধর্ম্ম স্থাপন করেন, ধর্ম্ম হইতে স্বর্গ স্থাপিত হয়, রাজার প্রভাবেই নির্বিঘ্নে যাবতীয় যজ্ঞক্রিয়া নির্বাহ হয়, অনুষ্ঠিত যজ্ঞক্রিয়া দ্বারা দেবতাদিগের প্রীতি জন্মে, দেবতা হইতে বৃষ্টি, বৃষ্টি হইতে শস্য, শস্য হইতে মনুষ্যদিগের প্রাণ ধারণ হয়। অতএব অভিষেকাদিগুণসম্পন্ন রাজা মনুষদিগের বিধাতা স্বরূপ। ভগবান স্বায়ম্ভুব মনু কহিয়াছেন, রাজা দশ শ্রেত্রিয়ের সমান মান্য। সেই রাজা অদ্য ক্ষুধিত ও শ্রান্ত হইয়া, আমার মোনতধারণের বিষয় না জানিয়াই, এরূপ কর্ম্ম করিয়াছেন, সন্দেহ নাই। তুমি বালস্বভাবসুলভ অবিমৃষ্যকারিতাপরবশ হইয়া কি নিমিত্ত সহসা এরূপ দুর্ম্ম করিলে? রাজা কোনও ক্রমেই আমাদিগের শাপ দিবার পাত্র নহেন।