পাতা:মহাভারত - উপক্রমণিকাভাগ - ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর.pdf/২০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৯৬
মহাভারত।

সেই মহাতপাঃ মহাত্মা গমন করেন, আমি তাহাকে পুত্রের বিষয় জিজ্ঞাসা করিয়াছিলাম। তিনি, অস্তি অর্থাৎ গর্ভসঞ্চার হইয়াছে, এই মাত্র উত্তর প্রদান করিয়া প্রস্থান করিলেন। তিনি পরিহাসকালেও ভুলিয়া কখনও মিথ্যা কথা কহেন নাই, সুতরাং এমন গুরুতর বিষয়ে মিথ্যা কহিবেন কেন? তিনি, হে ভুজঙ্গমে! তুমি পরিতাপ করিও না, তোমার গর্ভে প্রদীপ্ত দিবাকর ও প্রজ্বলিত অনলতুল্য তেজস্বী এক পুত্র জন্মিবেক, এই কথা বলিয়া গিয়াছেন। অতএব ভ্রাতঃ! তোমার মনে যে বিষম দুঃখ আছে, তাহা দূর কর।

 নাগরাজ বাকি এই বাক্য শ্রবণ করিয়া তথাস্তু বলিলেন, এবং আহ্লাদসাগরে মগ্ন হইয়া ভগিনীর যথোচিত সম্মান ও সমাদর করিলেন। যেমন শুক্লপক্ষের শশাঙ্ক অন্তরীক্ষে দিন দিন বৃদ্ধি প্রাপ্ত হইতে থাকে, তদ্রপ তাহার গর্ভ দিন দিন বৃদ্ধি পাইতে লাগিল। পূর্ণ কাল উপস্থিত হইলে, নাগভগিনী জরৎকারু পিতৃ মাতৃ উভয় কুলের ভয়হারক দেবকুমারতুল্য এক কুমার প্রসব করিলেন। নাগভাগিনেয় মাতুলালয়েই প্রতিপালিত হইতে লাগিলেন। অসাধারণ বুদ্ধিশক্তি ও জ্ঞানবৈরাগ্যদিগুণসম্পন্ন বালক বাল্যকালেই ব্রহ্মচর্য অবলম্বন করিয়া ভৃগুকুলোদ্ভব চ্যবন মুনির নিকট যাবতীয় বেদ ও বেদাঙ্গ অধ্যয়ন করিলেন। যৎকালে তিনি গর্ভস্থ ছিলেন, তাঁহার পিতা, অস্তি, বলিয়া বনপ্রস্থান করেন, এই নিমিত্ত তিনি লোকে আস্তীক নামে প্রসিদ্ধ হইলেন। ভুজগরাজ পরম ধতে সেই অপ্রমিতবুদ্ধিশালী বালকের লালন পালন করিতে লাগিলেন। তিনিও দিন দিন বৃদ্ধি প্রাপ্ত হইয়া নাগকুলের আনন্দ বর্দ্ধন করিতে লাগিলেন।