পাতা:মহাভারত - উপক্রমণিকাভাগ - ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর.pdf/২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৪
মহাভারত।

মনে মনে চিন্তা করিতে লাগিলেন, কি রূপে এই গ্রন্থ শিষ্যগণকে অধ্যয়ন করাইব। ভূতভাবন ভগবান্ হিরণ্যগর্ব্ভ, পরাশরতনয়ের উৎকণ্ঠার বিষয় অবগত হইয়া, তাঁহাকে ও নরলোককে চরিতার্থ করিবার অভিপ্রায়ে স্বয়ং তৎসমীপে উপস্থিত হইলেন। ব্যাসদেব দর্শনমাত্র গাত্রোত্থান করিয়া কৃতার্থম্মন্য ও বিস্ময়াবিষ্ট চিত্তে সাষ্টাঙ্গ প্রণিপাত করিলেন, এবং স্বহস্তদত্ত আসনে উপবেশন করাইয়া অঞ্জলিবন্ধ পূর্ব্বক সম্মুখে দণ্ডায়মান রহিলেন। অনন্তর ব্রহ্মা তাঁহাকে অসিনপরিগ্রহের অনুমতি প্রদান করিলে তিনি প্রীতি প্রফুল্ল নয়নে তদীয় আসনসন্নিধানে উপবিষ্ট হইয়া বিনয়বচনে নিবেদন করিলেন, ভগবন্! আমি মনে মনে এক পরম পবিত্র কাব্য রচনা করিয়াছি, তাহাতে বেদ বেদাঙ্গ ও উপনিষদ্ সমুদায়ের ব্যাখ্যা, ইতিহাস ও পুরাণের অর্থ সমর্থন, ভূত ভবিষ্যৎ বর্ত্তমান কালত্রয়ের নির্ণয়, জরা মৃত্যু ভয় ব্যাধি ভাব অভাব নিরূপণ, নানাবিধ ধর্ম্ম ও আশ্রমের লক্ষণ নির্দ্দেশ, চাতুর্ব্বণ্য মীমাংসা, পৃথিবী চন্দ্র সূর্য্য গ্রহ নক্ষত্র ও চতুর্যুগের বিবরণ, নারায়ণ যে যে কারণে যে যে দিব্য ও মানব যোনিতে জন্ম গ্রহণ করিয়াছেন তাহার কীর্ত্তন, এবং অশেষ পবিত্র তীর্থ, নানা দেশ, নদ, নদী, বন, পর্ব্বত, সাগর, গ্রাম, নগর, দুর্গ, সেনা, ব্যুহরচনা, যুদ্ধকৌশল, বক্ত্তৃবিশেষে কথনবৈচিত্র্য, লোকযাত্রা-বিধান, এই সমস্ত ও অপরাপর যাবতীয় বিষয়ের সবিশেষ নিরূপণ করিয়াছি, কিন্তু ভূতলে তদুপযুক্ত লেখক দেখিতেছি না।

 ব্রহ্মা কহিলেন, বৎস! এই ভূমণ্ডলে অনেকানেক মহা-প্রভাব ঋষি আছেন, কিন্তু রহস্যজ্ঞানশালিতা প্রযুক্ত তুমি সর্ব্বোৎকৃষ্ট। জন্মাবধি তুমি কখনও বিতথ বাক্য উচ্চারণ কর নাই; এক্ষণে তুমি স্বরচিত গ্রন্থকে কাব্য বলিয়া নির্দ্দেশ