পাতা:মহাভারত - উপক্রমণিকাভাগ - ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর.pdf/২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আদিপর্ব্ব
১৫

করিলে, অতএব তোমার এই গ্রন্থ কাব্য বলিয়া বিখ্যাত হইবেক। যেমন গৃহস্থাশ্রম অন্যান্য সমস্ত আশ্রম অপেক্ষা উৎকৃষ্ট, সেইরূপ তোমার এই কাব্য অন্যান্য যাবতীয় কবির কাব্য অপেক্ষা উৎকৃষ্ট। এক্ষণে তুমি গণেশকে স্মরণ কর, তিনি তোমার কাব্যের লেখক হইবেন।

 ইহা বলিয়া ব্রহ্মা স্বস্থানে প্রস্থান করিলে সত্যবতীতনয় গণপতিকে স্মরণ করিলেন। ভক্তবৎসল ভগবান্ গণনায়ক স্মৃতমাত্র ব্যাসদেবসন্নিধানে উপস্থিত হইলেন। অনন্তর তিনি যথোপযুক্ত পূজা প্রাপ্তি পূর্ব্বক আসন পরিগ্রহ করিলে বেদব্যাস নিবেদন করিলেন, হে গণেশ্বর! আমি মনে মনে ভারত নামে এক গ্রন্থ রচনা করিয়াছি, আমি বলিয়া যাই, আপনি লিখিয়া যান। ইহা শুনিয়া বিঘ্নরাজ কহিলেন, হে তপোধন! লিখিতে আরম্ভ করিলে যদি আমার লেখনীকে বিশ্রাম করিতে না হয়, তবে আমি লেখক হইতে পারি। ব্যাসও কহিলেন, কিন্তু আপনিও অর্থগ্রহ না করিয়া লিখিতে পারিবেন না। গণনায়ক তথাস্তু বলিয়া লেখক অঙ্গীকার করিলেন। মহর্ষি দ্বৈপায়ন এই নিমিত্তই কৌতুক করিয়া মধ্যে মধ্যে দুরূহ গ্রন্থগ্রন্থি রচনা করিয়াছেন, এবং প্রতিজ্ঞা করিয়া কহিয়াছেন, এই গ্রন্থে এরূপ অষ্ট সহস্র অষ্ট শত শ্লোক আছে যে, কেবল শুক ও আমি তাহার অর্থ বুঝিতে পারি; অপরের কথা দূরে থাকুক, সঞ্জয় বুঝিতে পারেন কি না সন্দেহ। অস্ফুটার্থতা প্রযুক্ত সেই সকল ব্যাসকূটের অদ্যাপি কেহ ব্যাখ্যা করিতে পারেন না। গণেশ সর্বজ্ঞ হইয়াও সেই সকল স্থলে অর্থবোধানুরোধে মন্থর হইতেন, ব্যাসদেব সেই অবকাশে বহুতর শ্লোক রচনা করিতেন।

 জীবলোক অজ্ঞানতিমিরে অভিভূত হইয়া ইতস্ততঃ অনর্থ