পাতা:মহাভারত - উপক্রমণিকাভাগ - ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর.pdf/৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৭৮
মহাভারত।

নিমিত্ত সেই নাগরাজ তক্ষকের স্তব করি। তক্ষক ও অশ্বসেন উভয়ে সকালে পরস্পর সহচর হইয়া কুরুক্ষেত্রে ইক্ষুমতী নদীতীরে বাস করিয়াছিলেন, যে মহাত্মা তক্ষকপুত্র শ্রুতসেন নাগপ্রাধান্যলাভাকাঙক্ষী হইয়া কুরুক্ষেত্রে সূর্যের আরাধনা করিয়াছিলেন, তাহাকে প্রণাম করি।

 ব্রহ্মর্ষি উতঙ্ক এই রূপে নাগশ্রেষ্ঠদিগের স্তব করিয়াও কুণ্ডল না পাইয়া অত্যন্ত চিন্তাকুল হইলেন। নাগগণের স্তব করিয়াও যখন কুণ্ডল প্রাপ্ত হইলেন না, তখন দেখিলেন, দুই স্ত্রী উত্তম বেমযুক্ত তন্ত্রে বস্ত্র বয়ন করিতেছে, সেই তন্ত্রের সূত্র সকল শুক্ল ও কৃষ্ণবর্ণ। ইহাও দেখিলেন, ছয় কুমার দ্বাদশ অরবিশিষ্ট এক চক্র পরিবর্তিত করিতেছে। আর এক পুরুষ ও সুন্দরাকার এক অশ্ব অবলোকন করিলেন। তখন তিনি বক্ষ্যমাণ প্রকারে তাহাদিগের সকলের স্তব করিতে লাগিলেন।

 উতঙ্ক কহিলেন, এই আকল্পস্থায়ী নিত্য ভ্রমণশীল চতুবিংশতিপযুক্ত চক্রে ত্রিশত ষষ্টি তন্তুজাল অর্পিত আছে, ঐ চক্রকে ছয় কুমারে পরিবর্তিত করিতেছে। বিচিত্ররূপা দুই যুবতী শুক্ল কৃষ্ণ সূত্র সমূহ দ্বারা এক তন্ত্রে বস্ত্র বয়ন করিতেছেন, তাহারাই সমস্ত ভূত ও চতুর্দশ ভুবন উৎপাদন করেন। যে বজধারী, ভুবনপালক, বৃহন্তা, নমুচিঘাতী, কৃষ্ণবর্ণবস্ত্রযুগলপরিধায়ী মহাত্মা লোকে সত্য ও অনৃত বিভক্ত করেন, এবং যিনি এই বিশ্বশরীর সৃজন করি তাহাতে প্রতিবিম্বরূপে প্রবেশ করেন, সেই সকলভুবননিয়ন্তা ত্রিলোকনাথ পুরন্দরকে প্রণাম করি।

 অনন্তর সেই পুরুষ উভঙ্ককে কহিলেন, আমি তোমার এই স্তবে প্রসন্ন হইয়াছি, তোমার কি উপকার করিব, বল। উতঙ্ক কহিলেন, এই করুন, যেন সমস্ত নাগ আমার বশে আইসে।