পাতা:মহুয়া-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.djvu/৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 “পূরবী ও মহুয়ার মাঝখানে আর-একদল কবিতা আছে,— সেগুলি অন্য জাতের। তাদের মধ্যে নটরাজ ও ঋতুরঙ্গই প্রধান। নৃত্যা- ভিনয়ের উপলক্ষ্য নিয়ে এগুলি রচিত হ’য়েছিলো কিন্তু এরাও স্বভাবতই উপলক্ষ্যকে অতিক্রম ক’রেছে। আর কোনোখানেই শান্তিনিকেতনের মতো ঋতুর লীলারঙ্গ দেখিনি—তা’রই সঙ্গে মানব-ভাষায় উত্তর প্রত্যুত্তর কিছুকাল থেকে আমার চ’লছে। তা’র রীতিমতো শুরু হ’য়েছে শারদোৎসবে—তা’রপরে ঋতুগীতির প্রবাহ বেয়ে এসে প’ড়েছিলে। ঋতু-রঙ্গে। বিষয় এক তবু প্রভেদ যথেষ্ট। সেই প্রভেদ যদি না থাক্‌তো তা’হলে লেখবার উৎসাহই থাক্‌তো না। মহুয়ার কবিতা যখন প’ড়্‌বে তখন আমার স্বভাবের এই কথাটা মনে রেখো। এই বইয়ের প্রথমে ও সব শেষে যে-গুটিকয়েক কবিতা আছে সেগুলি মহুয়া পর্য্যায়ের নয়। সেগুলি ঋতু-উৎসব পর্য্যায়ের। দোল-পূর্ণিমায় আবৃত্তির জন্যেই এদের রচনা করা হ’য়েছিলো। কিন্তু নব-বসন্তের আবির্ভাবই মহুয়া কবিতার উপযুক্ত ভূমিকা বলে নকীবের কাজে ওদের এই গ্রন্থে আহ্বান করা হ’য়েছে।”

 “মহুয়া নামটা নিয়ে তোমার মনে একটা দ্বিধা হ’য়েছিলো জানি। কাব্যের বা কাব্য-সংকলন গ্রন্থের নামটাকে ব্যাখ্যামূলক ক’র্‌তে আমার প্রবৃত্তি হয় না। নামের দ্বারা আগে-ভাগে কবিতার পরিচয়কে সম্পূর্ণ বেঁধে দেওয়াকে আমি অত্যাচার মনে করি। কবিতার অতি- নির্দিষ্ট সংজ্ঞা প্রায়ই দেওয়া চলে না। আমি ইচ্ছা ক’রেই মহুয়া নামটি দিয়েছি, নাম পাছে ভাষ্যরূপে কর্ত্তৃত্ব করে এই ভয়ে। অথচ কবিতাগুলির সঙ্গে মহুয়া নামের একটুখানি সঙ্গতি আছে—মহুয়া বসন্তেরই অনুচর, আর ওর রসের মধ্যে প্রচ্ছন্ন আছে উন্মাদনা। যাই হোক্ অর্থের অত্যন্ত বেশি সুসঙ্গতি নেই ব’লেই কাব্যগ্রন্থের পক্ষে এ নামটি উপযুক্ত ব’লে আমি বিশ্বাস করি।”