পাতা:মাইকেল মধুসূদন দত্তের জীবন-চরিত - যোগীন্দ্রনাথ বসু.pdf/২৬৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শৰ্ম্মিষ্ঠা ও পদ্মাবতী রচনা । RRy রীতি ভিন্ন অন্য কোন রীতিতে যে নাটক রচনা হইতে পারে, অনেকের সেরূপ ধারণা পৰ্যন্ত ছিল না। মধুসুদন শৰ্ম্মিষ্ঠায়, কিয়ৎ পরিমাণে, ইংরাজী রীতি প্ৰবৰ্ত্তন করিয়াছিলেন । তিনি গ্ৰন্থারম্ভে নান্দী এবং নটী ও সুত্রধরের অভিনয় ত্যাগ করিয়াছিলেন । সংস্কৃত আলঙ্কারিকদিগের মতে অঙ্কে ও গর্ভাঙ্কে যেরূপ পার্থক্য রাখা কৰ্ত্তব্য এবং নাটকীয় পাত্ৰগণ৷ যেরূপ লক্ষণাক্রান্ত হওয়া আবশ্যক, তিনি সে বিষয়ে তাদৃশ মনোযোগী হন নাই । ব্যাকরণে বা অলঙ্কার-শাস্ত্ৰে তাহার কোন কালেই অধিকার ছিল না; সুতরাং তঁহার রচনা অনেক স্থলে ব্যাকরণ-দুষ্ট ও অলঙ্কারবিরুদ্ধ হইয়াছিল। সংস্কৃত-রীতিপক্ষপাতিগণের নিকট মধুসূদনের এই সকল ক্ৰটী আমাৰ্জনীয় বলিয়া বিবেচিত হইল। তাহারা মধুসূদনের রচনায় “দুঃশ্রবত্ব,” “চুত-সংস্কারত্ব”, “নিহতাৰ্থত্ব”, এবং “অবিস্মৃষ্টি-বিধেয়াংশ” প্রভৃতি নানাবিধ অলঙ্কার শাস্ত্ৰোক্ত দোষ নির্দেশ করিয়া তাহার প্রতি উপেক্ষা প্ৰদৰ্শন করিলেন । সংস্কৃত কলেজের খ্যাতনামা অধ্যাপক, মহা মহোপাধ্যায় প্ৰেমচান্দ তর্কবাগীশ মহাশয় তখনকার পণ্ডিতমণ্ডলীর অগ্রগণ্য ছিলেন । কাব্য ও নাটকাদির দোষগুণ সম্বন্ধে তাহার মতামত লোকে অবিসম্বাদিত চিত্তে গ্ৰহণ করিতেন । রাজাদিগের উপরোধে তিনি শৰ্ম্মিষ্ঠার পাণ্ডুলিপি সংশোধন করিয়া দিতে স্বীকৃত হইয়াছিলেন ; কিন্তু কিয়দংশ দেখিয়াই, উপেক্ষার সহিত প্ৰতাপণ করিয়া বলিলেন ;- “সংস্কৃত রীতি অনুসারে ইহা নাটকই হয় নাই ; কাটকুট করিলে রচনাটী সমুদয়ই নষ্ট হইবে, আমার ইহা সংশোধন করিতে ইচ্ছা নাই । বোধ হয়, ইহা কোন ইংরাজী শিক্ষিত, নব্য বাবুর রচনা হইবে।” প্ৰাচীন সম্প্রদায় তর্কবাগীশ মহাশয়ের এইরূপ তীব্র সমালোচರ್ಗ বিলক্ষণ পরিতুষ্ট হইলেন। কিন্তু নব্য সম্প্রদায় তাহাতে নিরস্ত হইলেন না। মধুসূদনের ন্যায় তাহারাও ব্যাকরণের বা অলঙ্কার শাস্ত্রোক্ত প্ৰেমচান্দ তর্কবাগীশ মহাশয়ের শৰ্ম্মিষ্ঠা নাটক সম্বন্ধে উপেক্ষ ।