পাতা:মাইকেল মধুসূদন দত্তের জীবন-চরিত - যোগীন্দ্রনাথ বসু.pdf/৫৫০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

O জীবন-চরিত । বহিদ্বরে, কত যে কি রাখিতাম পাতে চুরি করি আনি আমি পড়ে কিহে মনে ? হরিতকী স্থলে, সখে, পাইতে কি কভু তাম্বুল শয়নধামে ? কুশাসন তলে হে বিধু, সুরভিকুল কভু কি দেখিতে ?” বীরাঙ্গনার পত্রিকাগুলি বিশ্লেষণ করিলে প্ৰত্যেক স্থলেই কবির এইরূপ নৈপুণ্য লক্ষিত হইবে। তারা, শূৰ্পণখা প্ৰভৃতির পত্রে যেমন রূপজ মোহের প্রগাঢ়তা প্ৰদৰ্শিত হইয়াছে, প্রেমের লালসাহীন, উচ্চ আদর্শও তেমনই রুক্মিণী দেবীর পত্ৰে প্ৰকটিত হইয়াছে । রুক্মিণী দেবীর পত্রে ইন্দ্ৰিয়-বিকারের চিহ্ন নাই, রূপ, যৌবনের প্রসঙ্গ নাই ; যে হৃদয়, প্রিয়তমকে না দেখিয়া, কেবল তাহার গুণকাহিনী শুনিয়াই, আত্মসমৰ্পণ করিতে পারে, তাহাতে ইন্দ্ৰিয়বিকার থাকিতে পারে না । হৃদয়ে যে অনুরাগ উদিত হইলে ভক্ত, আরাধ্য দেবতাকে, প্ৰভু, পিতা, মাতা, সখা প্ৰভৃতি নিম্নতর ভাব ভুলিয়া, প্ৰাণেশ্বৰ ভাবে ভালবাসিবার জন্য ব্যাকুল হন, রুক্মিণীদেবীর প্রেমের মূলে সেই অনুরাগ বৰ্ত্তমান। কি জন্য লজ্জাশীল কুলবালা হইয়াও রুক্মিণীদেবী আপনার প্ৰিয়তমকে পত্ৰ লিখিতে সাহসী হইয়াছিলেন, কবি তাহার অতি সুন্দর কারণ প্ৰদৰ্শন করিয়াছেন। সন্ন্যাসিনী ধেমান, নির্জন ধন প্রদেশে ইষ্টদে পেদ্র মূৰ্ত্তি স্থাপন করিয়া গোপনে পূজা করেন, রুক্মিণীদেবীও তেমনই নিজের হৃদয়মন্দিরে ইষ্টদেবরূপী প্রিয়তমের সুশ্যাম মূৰ্ত্তি স্থাপন করিয়া ভক্তিভরে পূজা করিতেন । কেহ জানিত না, কেহ দেখিত না ; তাহার হৃদয় তাহাতেই পরিতৃপ্ত ছিল ; কিন্তু রুক্মিণীদেবীর নির্জন পূজাতে ব্যাঘাত ঘটিয়াছিল। কালরূপী শিশুপাল তঁাহাকে গ্ৰাস করিতে আসিতেছিল, তাই তিনি সেই বিপদভঞ্জনকে লিখিয়াছিলেন ;- “তার, হে তারক তারে এ বিপত্তি কালে।”