পাতা:মাইকেল মধুসূদন দত্তের জীবন-চরিত - যোগীন্দ্রনাথ বসু.pdf/৭১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Gr জীবন-চরিত । ܝܹܠ আমরা উভয়ে যখন ৫ম শ্রেণীতে পড়ি, সেই সময়ে একবার আমার স্কুলের ১৬ মাসের বেতন বাকী পড়ে। মাসিক ৫০ টাকার হিসাবে বেতন ধরিয়া ১৬ মাসে ৮০ টাকা হয় । আমার পিতা ব্ৰাহ্মণ পণ্ডিত ছিলেন ; সুতরাং এত টাকা পরিশোধের পর আবার মাসিক ৫০ টাকা বেতন দিয়া আমাকে হিন্দুকলেজে পড়ান। তাহার পক্ষে বড় সুসাধ্য ছিল না ; অগত্যা আমার হিন্দুকলেজে পড়া বন্ধ হইবার উপক্রম হইয়া উঠিল। মধু সেই কথা শুনিয়া বলিল, “তুমি নাকি হিন্দুকলেজে পড়া বন্ধ করিবে ?” আমি বলিলাম, “হী, আমাদের অবস্থা ত বুঝিতেছ ; ৫১ টাকা করিয়া মাসিক বেতন দেওয়া বাবার পক্ষে কষ্টকর, কাজেই আমাকে পড়া বন্ধ করিতে হইবে।” এই কথায় মধু বিশেষ ক্ষুব্ধ হইয়া বলিল, “কোন ভাই, টাকার জন্য তোমার পড়া বন্ধ হইবে, আমি ত আমার মায়ের কাছ থেকে অনেক টাকা জলপানি পাই, আমার টাকা হইতে তোমার স্কুলের বেতন দেওয়া চলিতে পরিবে।” ঐ বৎসর ৫ম শ্রেণীতে আমরা জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষার জন্য প্ৰস্তুত হইতেছিলাম, সুতরাং অল্পদিন মধ্যে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হইয়া বৃত্তি পাওয়ায়, আমাকে মধুর অর্থ সাহায্য গ্ৰহণ করিতে হয় নাই। কিন্তু একথা বলিয়া রাখি যে, মধুর টাকা গ্ৰহণ করিতে যে আমি কুণ্ঠিত হইতাম, তাহা নহে; আমি মধুকে এতই আপনার বলিয়া মনে করিতাম । ৫ম শ্রেণীতে জুনিয়র বৃত্তি পাইয়া আমি, মধু ও আমাদের আব্ব কয়েকজন সমপাঠী আমরা একেবাবে ২য় শ্রেণীতে উন্নীত হইলাম। মধুৰ সহিত আমার সৌহার্দা পূর্বের ন্যায় তখনও অক্ষুন্ন। ইংরাজী কবিতা মধু যাহা লিখিত বা নুতন পড়িত, আমাকে জেদ করিয়া শুনাইত ; কিন্তু তাচার ব্যবহারের বিষয়ে অমাব সহিত তাহার কোন কথাবাৰ্ত্তা হইত না । সে সকল বিষয় আমার নিকটে সযত্বেই গোপন রাখিত । কখন কথা উঠিলে হাসিয়া উড়াইয়া দিত। একদিন কলেজে আসিয়া মধু আপন মাখা আমাকে দেখাইয়া বলিল, “দেখ দেখি, কেমন চুল কাটিয়াছি। ইহাব জন্য আমার এক মোহর ব্যয় হইয়াছে।” মধু সে দিন ফিৰিঙ্গীর মত চুল কাটিং আসিয়াছিল—সম্মুখের চুলগুলা বড়, ঘা ড়ের চুলগুলা ছোট। আমি বলিলাম, “একি করিয়াছ, তোমার পক্ষে এ ঠিক ३ नाहै । তুমি q夺5可 জিনিয়াস (genius) ; জিনিয়াস যারা, তার नूऊन नूऊन বিষয় উদ্ভাবন কারিয়া থাকে। তুমি যদি পাঁচ চুড়া, কি সাত চুড়া, কি নচুড়া কাটিয়া আসতে, তা হলে যা হেৰু একটা নুতন রকম কিছু হ’তো ; তা না ক’রে ফিরিঙ্গীর মতন চুল কেটে এসেছী। এরূপ নাচ অনুকরণ প্রবৃত্তিটা ভাল নয়। * আমার কথায় মধু যেন কিছু বিরক্ত হইল বলিয়া বোধ হইল। সে দিন। আর আমার কাছে ঘোঁসিয়া বসিল না, একটু তফাতে বসিল । আঁমার মনে কিছু কষ্ট হইল। মনে হইল, কথাটা বলা ভাল হয় নাই, মধু অন্তরে ব্যথা পাইয়াছে। যাহা হউক, আমি মধুর কাছে সরিয়া বসিলাম এবং তাহাকে তুষ্ট করিবার চেষ্টা পাইলাম। তাহার পরদিন মধু আর কলেজে আসিল না। অনুসন্ধানে জানিলাম, মধু খৃষ্টান হইতে গিয়া.ছ ; শুনিয়া বড়ই বিস্ময়াপন্ন হইলাম। বিস্ময়াপন্ন হইলাম। এই জন্য যে, মধুৰ সঙ্গে আমার প্রগাঢ় বন্ধুত্ব ; মধু খৃষ্টান হইবে, খৃষ্টান হইবার দিকে তাহান্ন মন গিয়াছে, এ সকল কথা ঘূণাক্ষরেও আমায় কোন 鲁