পাতা:মাইকেল মধুসূদন দত্তের জীবন-চরিত - যোগীন্দ্রনাথ বসু.pdf/৮০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

O জীবন-চরিত । বিষয়ে বঙ্গসমাজ ইহঁদিগের নিকট যে ঋণ প্ৰাপ্ত হইয়াছেন, তাহা বিশ্বত হইবার নয় । মধুসুদন যে এইরূপ প্ৰতিষ্ঠাবান ছাত্ৰগণের মধ্যে “ঔজ্জল্যে তারকা মণ্ডলীর মধ্যে বৃহস্পতির ন্যায় ছিলেন,” ইহা । র্তাহার প্রতিভার পক্ষে সামান্য গৌরবের বিষয় নয় । গ্রামস্থ পাঠশালায় অধ্যয়ন করিবার সময়ে তাহার চরিত্রে যে সকল গুণ লক্ষিত হইত, হিন্দু কলেজের শিক্ষায় তাহা সম্যকরূপ পরিবদ্ধিত হইয়াছিল । বিদ্যোপার্জনে অনুরাগ ও উচ্চাভিলাষ প্ৰভৃতি তাহার শৈশবের গুণ সকল কলেজীয় শিক্ষায় আরও অধিক স্ফৰ্ত্তি লাভ করিয়াছিল। পাঠশালার কোন ছাত্র লেখাপড়ায় তাহাকে অতিক্রম করিলে তিনি তাহা সহ্যু করিতে পারিতেন না ; কলেজেও যাহাতে তেঁাহার কোন সহাধ্যায়ী তাঁহাকে পরাস্ত করিতে না পারেন, তজ্জন্য তিনি পরিশ্রম করিতে ক্ৰটী করিতেন না । কাটের ন্যায় কেবলই গ্ৰন্থ মধ্যে আবদ্ধ থাকিবার অভ্যাস। তঁহার কোন কালেই ছিল না। স্বভাবতঃ তিনি রহস্য-প্ৰিয় ছিলেন, এবং সহাপ্যায়িগণের সক্তিত আমোদ, কৌতুক ইত্যাদি পূর্ণ মাত্রায় করিতেন । কিন্তু লেখা পড়া করিতে বসিলে আমোদ, আকুলাদি কিছুই তাহার মনে থাকিত না । বিষয় বিশেষে মনঃসংযম করিবার শক্তিও তঁচাব অসাধারণ ছিল ; পড়িতে আরম্ভ করিলে ক্ষুধা, তৃষ্ণা সমস্তই তিনি বিশ্বত হইতেন। কলেজের মধ্যে একজন বহুগ্ৰন্থপাঠী ছাত্ৰ বলিয়া তাহার প্রতিষ্ঠা ছিল । কলেজের পঞ্চম শ্রেণীতে অধ্যয়নের সময়ে তিনি ইংরাজী সাহিত্য সম্বন্ধে এত গ্ৰন্থ পাঠ করিয়াছিলেন যে, বৰ্ত্তমান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাধিধারী অনেক উৎকৃষ্ট ছাত্রও তত পাঠ করেন। কি না। সন্দেহ । পাঠাবস্থায় সাহিত্যেরই দিকে তাহার অধিক অনুরাগ ছিল ; এবং অনেক সাহিত্য-সেবকের জীবনে যেমন দেখিতে পাওয়া গিয়া থাকে, সাহিত্যের প্রতি অতিরিক্ত অনুরাগ্যবশতঃ, তিনি গণিত-চৰ্চায় ঔদাসীন্ত শিক্ষাবিববণ ।