পাতা:মাইকেল মধুসূদন দত্তের জীবন-চরিত - যোগীন্দ্রনাথ বসু.pdf/৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

/o দেহে প্ৰবাহিত হইত, তাহা যেমন, তাহার দেহে প্ৰবাহিত হইতেছে, তেমনই যে দেবদুর্লভ শক্তিতে মধুসূদন অনুপ্ৰাণিত হইয়াছিলেন, তাহাও তেঁাহাতে বর্তমান আছে । তাহার সাহায্য লাভ করিয়া আমি উপকৃত এবং তঁহার স্নেহে ও শ্রদ্ধায় আমি গৌরবান্বিত হইয়াছি । মধুসূদনের জন্মভূমি ও পৈত্রিক বাসা-ভবন দর্শনের জন্য যে দিন আমি সাগরদাড়ীতে অবস্থান করি, সে দিনের স্মৃতি চিরদিন আমার হৃদয়ে জাগ্ৰত থাকিবে। মধুসূদনের পৈত্রিক বাসভবন এখনও বৰ্ত্তমান আছে। কালের কি কাল আক্রমণে সেই বিশাল অট্টালিকা ক্রমশঃ জীৰ্ণ হইয়া আসিতেছে। মধুসূদনের বংশীয়গণের আর সেই পূৰ্ব্ব গৌরব, পূর্ব সম্পদ নাই। যে গৃহে পিতামাতােব ক্ৰোড়ে মধুসূদনের সুখের শৈশব অতিবাহিত হইয়াছিল, তাহা এক্ষণে ধূলিসাৎ হইয়াছে। যে দেবীমণ্ডপে, উৎসব দিনে, উজ্জল বেশভূষায় সুসজ্জিত হইয়া, বালক মধুসুদন বিজয়াগীতি শ্রবণ করিতে করিতে অশ্রুপাত করিতেন, উৎসবানন্দ এক্ষণে সে মণ্ডপ হইতে অন্তৰ্দ্ধান করিয়াছে। } পারাবত ও চৰ্ম্মচটিকা এক্ষণে সেখানে বিহাৰ করিতেছে । সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সকলই পরিবৰ্ত্তিত হইয়াছে, কেবল মধুসূদনের বাল্যেব। সেই প্ৰিয় নদী কপোতাক্ষীব পবিবৰ্ত্তন নাই । নিৰ্ম্মল সলিলরাশি বহন করিয়া, এখনও তাঁহা, “দুগ্ধ-স্রোতের” ন্যায়, মৃদু কলকলধ্বনিতে প্ৰবাহিত হইতেছে। কপোতাক্ষীর কূলের সেই দুর্বপ্রসারিত প্ৰান্তর, নিদাঘসন্ধ্যার সেই সুস্নিগ্ধ সমীরণ, অৰ্দ্ধস্ফুট সেই মধুৰ জ্যোৎস্নালোক, মধুসূদনের স্বদেশীয়গণের সেই কথোপকথন এবং সর্বোপরি মেঘনাদবধরচয়িতার স্মৃতি, সম্মিলিত হইয়া, সে দিন হৃদয়ে যে ভাব মুদ্রিত করিয়াছিল, তাহা কোন দিন বিলুপ্ত হইবার নয়। মধুসূদনের স্বদেশীয়গণের একান্ত বাসনা, যে তঁহার জন্মভূমিতে তাহার কোনরূপ স্মৃতিচিহ্ন প্রতিষ্ঠিত হয়। মধুসূদন অপর কোন দেশে জন্মগ্রহণ করিলে, তাহাদিগের বাসনা যে এত দিনে পুর্ণ হইত, তাহাতে সন্দেহ