বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:মাঝির ছেলে - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১০২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মাঝির ছেলে
৯৬

মন খারাপ হয়ে গেল না, বরং তার ভয়ঙ্করের প্রত্যাশার সঙ্গে এই ঘন অন্ধকারকেই যেন মানান-সই মনে হতে লাগল।

 আজও বহুদূরে কুতুবদিয়ার লাইটহাউসের আলো দক্ষিণ-পূর্ব কোণ থেকে পূবে পাশের দিকে সরে যেতে থাকে। নাগা ভাবে, আজ তো তারা নেই আকাশে, আজ ভিমনা জাহাজের পাত্ত পাবে কি করে? ভিমনার। মুখ দেকে তাকে কিছু জিজ্ঞাসা করতে নাগা ভরসা পায় না, কৌতুকটা চেপে যায়।

 পঞ্চর মুখ অনেকক্ষণ থেকে পাংশু দেখাচ্ছিল, সে জিজ্ঞাসা কুর, ঝড়। উঠবে নাকি রে নাগা?”

 নাগা বলে, “কে জানে।”

 তার পর এক সময় লঞ্চের গতিবেগ হঠাৎ কমে যায়, কিন্তু সেদিনের মত লঞ্চ চক্রাকারে ঘুরে ঘুরে জাহাজের জন্য অপেক্ষা করে না। জাহাজ আজ আগে এসে পৌছেছে, খানিক তফাতে আলো দেখা যাচ্ছে।

 সেদিনের মত আজও জাহাজের বোট মাল ও মানুষ পৌছে দিয়ে গেল। এবার মানুষের সংখ্যা কম। কিন্তু মালের পরিমাণ বেশী। কাঠের বাক্সই এবার এল প্রায় দু'ডজন এবং ওয়াটার-প্রাফ কাপড়ে মোড়া মাল আগের বারের প্রায় দ্বিগুণ। জাহাজের সেই জাপানী অফিসারটি এসে হাসিমুখে ডেনিস ও যাদববাবুর হাতে হাত মেলানো বিলাতী ভদ্রতা করে নোটের তাড়া পকেটে নিয়ে ফিরে গেল।

 যাওয়ার আগে ভাঙ্গা ভাঙ্গা ইংরাজীতে বলে গেল, “তাড়াতাড়ি ফিরে যাও, তোমাদের এই খেলনা জাহাজ ঝড়ে টিকবে না।”

 বন্দরের দিকে লঞ্চের মুখ ফিরিয়ে ভিমনা বলল, “ব্যাপার সুবিধে লাগে। না কর্তা। আইজ বন্দরে থোকন লাগিব সন্দ করি।”

 যাদববাবু বললেন, “থাকন লাগে থাকুম।”