পাতা:মাঝির ছেলে - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১০৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৯৯
মাঝির ছেলে

তাড়াতাড়ি পারে এগিয়ে গেল। ভিমনা দু’হাতে সজোরে হুইল চেপে ধরে আছে, কাছে দাঁড়িয়ে আছেন যাদববাবু।

 'ফেরাও ভিমনা, জাহাজ ফেরাও। পঞ্চু পুলিশরে ইশারা করছে।’

 'পুলিশ?'

 ভিমনার মাথা ঠিক যথাস্থানেই রইল, বন্দরের সীমানায় ঢুকে তীরের এত কাছে এসে অসতর্ক হলে চলবে না। নাগা আর যাদববাবুর মাথা তার মাথার কাছে ঘেঁসে এল। টর্চটা দেখিয়ে সংক্ষেপে ব্যাপারটা বুঝিয়ে দিয়ে নাগ। বলল, ‘এখন উপায় করেন।’

 ভিমনা তাকাল যাদববাবুর দিকে। যোদববাবু বাহির সমুদ্রের দিকে হাত বাড়িয়ে প্রয়োজনের চেয়ে জোরালো আওয়াজে বললেন, ‘লঞ্চ ফোরাও ভিমনা।’

 'লঞ্চ বাঁচবো না কর্তা।’

 যাদববাবু নীরবে আবার বন্দরের বিপরীত দিকে হাত বাড়িয়ে দিলেন। একমুহুর্তের জন্য তার মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে ভিমনা হঠাৎ তার ঝকঝকে দাঁত মেলে হাসল। মাথা হেলিয়ে সায় দিয়ে আরও জোরে হুইলটা চেপে ধরল।

 তারপর জলকন্যার মুখ বন্দরের দিক থেকে দ্রুতবেগে ঘুরে যেতে লাগল। ভিমনা কি সঙ্কেত পাঠাল নাগার অজানা উপায়ে, লঞ্চের সমস্ত আলো হঠাৎ নিভে গেল। অল্পক্ষণের মধ্যে দেখা গেল বন্দরের আলো পিছনে ফেলে লঞ্চ পশ্চিম দিকে এগিয়ে চলেছে।

 ডেনিস বোধ হয় কেবিনে ছিল। একটু পরেই গলার আওয়াজে বোঝা গেল সে কাছে এসে দাড়িয়েছে।

 'কি ব্যাপার?'

 ভিমনা তখন লঞ্চ সামলাতে ব্যস্ত, কথা বলার সময় নেই। যাদববাবু ডেনিসকে ব্যাপার বুঝিয়ে দিলেন। সমস্ত শুনে ডেনিস বলল, ‘রাইট। দশ বছর জেলে থাকার চেয়ে সমুদ্রের কবর অনেক, ভাল।’

 ভিমনা বলেছিল আসল ঝড় আরম্ভ হওয়ার আগেই বন্দরে পৌছতে পারবে। নাগা তার কথার অর্থ বুঝতে পারে নি। ঝড়ের বেগ আর