বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:মাঝির ছেলে - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
মাঝির ছেলে

 কখন নামতে হয় এই ভয়ে বোধ হয় স্টীমারে এটা ওটা মুখে দিলেও প্রাতঃকালীন জলখাবারটা স্থগিত রাখা হয়েছিল। একটু গুছিয়ে বসেই এবার তার আয়োজন শুরু করা হল। সে কি আয়োজন! নৌকার তক্তা পরিষ্কার তবু একটা সতরঞ্জি বিছান হল, বড় একটা বেতের বাস্কেট থেকে বার হল কলাই-করা প্লেট, গ্লাস, চায়ের কাপ ও কেটলি এবং মস্ত একটা মুখঢাকা এল্যুমিনিয়মের ডেকচি। প্রকাণ্ড একটা টিফিন ক্যারিয়ারও স্তূপাকার মালপত্র থেকে পৃথক করে আনা হল। মাধববাবুর স্ত্রী সকলকে খাবার সাজিয়ে দিলেন। ডেকচি থেকে দিলেন লুচি এবং টিফিন ক্যারিয়ার থেকে বেগুন ভাজা, আলুর দম আর কয়েক রকম মিষ্টি।

 ও নৌকায় ওরা খেতে থাকে আর এ নৌকায় নাগা ভাবে, বাবা, পেটুক তো ওরা সহজ নয়! কতদূর থেকে আসছে আর সকাল বেলার জলখাবারের জন্য সঙ্গে এনেছে বিয়ে পৈতের ভোজ!

 নাগার সমবয়সী রোগা ফরসা ছেলেটি হঠাৎ মন্তব্য করে বলল, ‘হাঁ কইরা আমাগো খাওয়া দেখছে দ্যাখো!’

 মাধববাবুর স্ত্রী বললেন, ‘চুপ কর্‌, খোকা!’

 লাল কাপড়-পরা মেয়েটি বলল, ‘দাদা য্যানো কী!’

 নাগা তাড়াতাড়ি মুখ ফিরিয়ে জাহাজ ছাড়ার আয়োজন দেখতে লাগল। অন্যদিন জাহাজ এতক্ষণ ঘাটে থাকে না। অতবড় ছেলের নাম খোকা! মেয়েটার নামও হয়তো খুকী! তাছাড়া, কি অদ্ভূত ওদের কথা বলার ভঙ্গি! জাহাজে মাঝে মাঝে কলকাতার লোক আসে, তাদের কথা নাগা শুনেছে। এরা যেন সেই কথার সঙ্গে এদেশী কথা মিশিয়ে একটা অদ্ভূত খিচুড়ি তৈরি করেছে! একটু পরে খোকার মা ডাকলেন, ‘ও বাছা শুনছ? এখানে এসো।’

 নাগা গেল না। সেইখানে এসে মুখ ফিরিয়ে বলল ‘কন?’

 খোকার মা বললেন, ‘একটু খাবার খেয়ে যাও।’ নাগা গম্ভীরভাবে মাথা নেড়ে বলল, ‘না খামু না। খিদা নাই।’


 যাদববাবু না এলে নৌকা ছাড়বার উপায় ছিল না। শেষ পর্যন্ত