বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:মাঝির ছেলে - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
মাঝির ছেলে

প্রস্তুত করে দিচ্ছেন, যাদববাবু বরং সেইটি ধারণ করুন। সব বিপদ কেটে যাবে।

 চাঁদ মাঝি সাগ্রহে বলল, ‘আমারেও একটা মাদুলি দেন ঠাকুরমশায়।’

 চাঁদ মাঝিরও মাদুলি চাই? কিন্তু মাদুলির খরচ যে তিন টাকা দশ আনা। সেটা তো দিতে হবে চাঁদ মাঝিকে। ধারে মাদুলি নিলে মাদুলির কোন কাজ তো হবে না!

 শুনে চাঁদ মাঝি মুষড়ে গেল।—‘তবে থাক্‌ গিয়া ঠাকুরমশায়! মরণ যদি অদেষ্টে থাকে মরুম, করুম কি!’

 যাদববাবু হেসে বললেন, ‘মরবি ক্যান্‌ রে চাঁদ? চাঁদেরে একটা মাদুলি দ্যান ঠাকুরমশায়।’

 তারপর চক্রবর্তী মশায় তো গেলেন পূজার ঘরে মাদুলি প্রস্তুত করতে আর চাঁদ মাঝি যাদববাবুর পায়ের ধূলা মাথায় নিয়ে বার বার বলতে লাগল, তিনি মানুষ নন, দেবতা-হঠাৎ কোথা থেকে দড়বড় শব্দে ছুটে এল কয়েকটা জানোয়ার। যাদববাবু মুখ ফিরিয়ে দেখলেন, চক্রবর্তী মশায়ের চারপেয়ে গাই ও বাছুর এবং একটি দু’পেয়ে রাখাল। মাঠে যাবার জন্য গোয়াল থেকে ছাড়া পেয়ে গাই ও বাছুর দু’জনেরই বোধহয় খুব স্ফূর্তি হয়েছিল-চারপায়ে লাফাতে লাফাতে ছুটছে। চাঁদ মাঝি কিন্তু মুখ ফিরিয়ে দেখবার সুযোগ পেল না, সমস্ত শরীরটা হঠাৎ যেন তার কাঠ হয়ে গেল, চোখ কপালে তুলে কাঁপতে কাঁপতে দু’চারবার এদিক্‌ ওদিক্‌ টলে সে দাওয়া থেকে নিচে পড়ে গেল।

 এখনো চাঁদের জ্ঞান হয় নি। অজয় ডাক্তার এসে দেখে গেছে, চাঁদের বাঁচবার আশা খুব কম। করবার আর কিছুই নেই, চক্রবর্তী মশায়ের বাড়িতেই চাঁদকে রেখে যাদববাবু চলে এসেছেন। বাঁকা বাপের শুশ্রূষা করছে।

 মাধববাবুর স্ত্রী বললেন, ‘ও মা! গণক তো তবে ঠিক বলেছে!’

 মাধববাবু বললেন, ‘ব্লাডপ্রেসার ছিল বোধ হয়, হঠাৎ শক খেয়ে—।

 যাদববাবু বললেন, ‘কেডা জানে?—অজয় ডাক্তার একবার কয় ব্লাডপ্রেসার, একবার কয় উইক হার্ট—সব আন্দাজী কথা।’