গিয়েছে। নাগা চুপচাপ নিজেদের নৌকায় উঠে বসে রইল। ঘাটে গিয়ে কি হবে, ভাড়াটে যদি মেলে হারু মাঝিই সঙ্গে নিয়ে আসবে। একটু পরে সার্চ লাইটের আলোয় হারুর চোখ ঝলসে দিয়ে আর ঘাট ও ঘাটের কাছাকাছি নদীতীর উদ্ভাসিত করে স্টীমার ঘাটে এসে লাগল এবং যথাসময়ে ছেড়ে চলে গেল। হারু মাঝিও মুখভার করে নৌকায় এল খানিক পরেই।
খবরটা জানাবার জন্য নাগার মন ছটফট করছিল, কিন্তু কথা আরম্ভ করার সুযোগও হারু তাকে দিলে না, নৌকায় পা দিয়েই জিজ্ঞাসা করল, ‘কত পাইছস্?’
‘ছয় আনা।’
‘দে।’
একটু ইতস্ততঃ করে নাগা তাকে পাঁচ আনা পয়সা দিল। —‘এক আনা নিলাম কাকা, কাম আছে।’ সারাদিন ভাড়াটে জোটে নি, হারুর মেজাজ আগুন হয়ে ছিল। চোখের পলকে সে বোমার মত ফেটে পড়ল। —‘কাম আছে! খাওয়ামু পরামু আমি, রোজগারের পয়সা দিয়া তর কাম আছে! দে কইলাম পয়সা, না দিস্ তো তরে আইজ আমি—’
নাগা নীরবে আনিটা হারুর সামনে ফেলে দিল।
‘ছুইড়া দিলি যে? মেজাজ দেখাস্ তুই কারে!’
সারাদিন আজ রোজগার হয় নি বলে হারু যেন সামনে যাকে পেয়েছে তার সঙ্গে ঝগড়া করবেই করবে, ঝগড়া না করলে তার গায়ের জ্বালা মিটবে না। প্রায়ই সে এরকম করে, কথা কইলেই রাগ বাড়ে বলে নাগা চুপ করে থাকে। সহজে বিগড়ে যাবার মত মেজাজ নাগার নয়। আজ কিন্তু হঠাৎ তার মাথা গরম হয়ে উঠল। যার অসুবিধার কথা ভেবে যাদববাবুর কাছে অমন সুখের চাকরি নেবে কিনা ঠিক করতে পারে নি, শুধু আধপেটা খেয়ে যার নৌকায় সে একা দু’জন মাঝির কাজ চালিয়ে দেয়, ছ’আনা রোজগারের মধ্যে এক আনা পয়সা নিজের জন্য রেখেছে বলে তার এমন ব্যবহার! হাতে না দিয়ে আনিটা সামনে ধরে দেওয়া পর্যন্ত হয়ে দাঁড়াচ্ছে তার মেজাজ দেখানো!