বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:মাঝির ছেলে - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
১৩
মাঝির ছেলে

 ‘নিজের মেজাজ সামলাও আগে, তারপর আমার মেজাজের কথা কইও।’

 ‘কি কইলি!’

 হারু মাঝি সজোরে নাগার গালে একটা চড় বসিয়ে দিল এবং তাতেও সন্তুষ্ট না হয়ে অনবরত কিল চড় লাগাতে লাগল নাগার গায়ে। নাগা আর কি করে, গুরুজনকে তো আর মারের বদলে মারা যায় না, সে শুধু ঠেলে হারু মাঝিকে ফেলে দিল নদীতে। তাকে শান্ত করার আর কোন উপায় ছিল না।

 ততক্ষণে আশে পাশের নৌকার মাঝিরা এ নৌকার নাটকীয় ব্যাপার সম্বন্ধে সচেতন হয়ে উঠেছে। হারু মাঝি নদীর জলে পড়তে কয়েকজন বাহবা দিয়ে উঠল। জল থেকে হারু মাঝি নৌকায় উঠতে উঠতে পাশের নৌকা থেকে চার পাঁচজন লাফিয়ে এ নৌকায় চলে এল আর গোলমাল শুনে ব্যাপার দেখতে এল একটু তফাতের গাধাবোট থেকে একজন বুড়ো মুসলমান মাঝি।

 নদীর জলে হারু মাঝির মেজাজ ঠাণ্ডা হবার বদলে আরও তেতে উঠেছিল। নৌকায় উঠেই সে নাগাকে আক্রমণ করতে গেল কিন্তু অন্য সকলে ধরে ফেলায় পারল না। শুধু মুখে গর্জাতে লাগল আর চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে সকলকে জানিয়ে দিতে লাগল, নাগা ছোঁড়া কত বড় বজ্জাত আর বেয়াদব।

 কিন্তু একপক্ষের অজুহাত শুনে তো বিচার চলে না; সকলে তাই ফাঁকে ফাঁকে নাগার বক্তব্যটাও শুনল। শুনে বুড়ো ওসমান দাড়িতে হাত বুলিয়ে আফসোস করে বলল, ‘অত বড় পোলার গায়ে হাত তুলছ, তোমার সরম নাই মাঝি?’

 সকলে সায় দিয়ে বলল, কাজটা সত্যই হারু মাঝির উচিত হয় নি।

 হারু মাঝি তখন এদের ওপর রাগ করে বলল, ‘বেশ করছি গায়ে হাত তুলছি, তোমাগো কি? যাও গিয়া তোমরা আমার নাও থেইকা।’

 এই সঙ্গে রাগের মাথায় বড় বিশ্রী একটা মন্তব্যও হারু মাঝি করে