এতটুকু একটা নৌকার বদলে ওই কলের জাহাজ চালাতে সাহায্য করতে পারত!
‘সমুদ্রযাত্রাও য্যান তর অদেষ্টে দেখি নাগা? হ, সমুদ্রেও তর যাওন লাগব।’
আরও কয়েকটি কথা চক্রবর্তী মশায় বললেন। তার মধ্যে প্রধান কথাটা এই যে, এক জায়গায় স্থির হয়ে থাকা নাগার কপালে নেই। এক জায়গা থেকে ক্রমাগত তাকে অন্য জায়গায় ঘুরে বেড়াতে হবে। কিন্তু মাঝির পক্ষে সেটা আশ্চর্য কি! মাঝির কাজই হ’ল এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ঘুরে বেড়ানো-বিশেষ করে কলের জাহাজের মাঝির।
চক্রবর্তীকে প্রণাম করে নাগা বিদায় নিল। হারু মাঝি নৌকায় ছিল না, আশেপাশে কোথায় যেন গেছে। একজন চেনা মাঝির নৌকা রামতলার দিকে যাবে, ছাড়বার উপক্রম করছিল, হারুমাঝি ফিরবার আগেই নাগা সে-নৌকায় রওনা হয়ে গেল।
নাগাকে দেখে যাদববাবু খুশী হয়ে বললেন, ‘আইছস্? ভাল করছস! তর জিনিসপত্তর কই?’
‘আমার কিছু নাই, কর্তা।’
তিন
যাদববাবুর বাড়ি এসে নাগার জগৎটাই যেন বদলে গেল। পেটের ভাবনা তো এখন আর তাকে ভাবতে হয় না। ‘কি খাব, কি খাব’ এই চিন্তার জেলখানায় সে যেন এতদিন কয়েদী হয়ে ছিল, এখন ছাড়া পেয়ে চারিদিকে তাকিয়ে দেখবার সুযোগ পেয়েছে। মানুষ থেকে শুরু করে ঘরবাড়ি, মাঠঘাট, নদী সব যেন খোলস ছেড়ে নতুন হয়ে উঠেছে তার কাছে। নতুন, কিন্তু অচেনা নয়। সাত সমুদ্র তের নদীর পারে কোন স্বপ্নের দেশে তো সে আসেনি, আগেও সে করমতলায় আসা-যাওয়া করেছে। এখানকার অনেক মানুষ তার পরিচিত। একটু সহজ স্নেহ-মমতা,