বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:মাঝির ছেলে - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৩
মাঝির ছেলে

বলে, না সে বেঁচে নেই। কেউ যদি সদরে নিজের চোখে পঞ্চুকে দেখে এসে তাড়াতাড়ি নকুলকে খবর দিতে আসে, নকুল ভয়ানক চটে যায়। বেঁচে নেই, বেঁচে নেই, পঞ্চু একবার নয় একশ’বার বেঁচে নেই। সে যাকে দেখে এসেছে সে পঞ্চু নয়!

 এদিকে কেউ যদি তার কথায় সায় দিয়ে বলে যে পঞ্চু সত্যই মরে গেছে, তাতেও তাকে বিশেষ খুশী হতে দেখা যায় না। মুখ ভার করে বসে থাকে।

 নাগাকে দেখে নকুলের বৌ বলে, “নতুন লাড়ু বানাইছি ভাইগ্‌না, কেডা জানে ক্যামন হইছে!’

 নাগা বলে, 'না খাইয়া ক্যামনে কমু মামী?'

 রূপা বলে, 'আমার বাচ্চা আনছ?'

 'বিয়াইলে আনুম।'

 'আইচ্ছা, আইচ্ছা, না আনিলা। আমার রাম-লক্ষ্মণ আছে।'

 রাম লক্ষ্মণ দুটি পোষমানা বেজি। রূপা তাদের বড় ভালবাসে।' ভালবাসার জন্য এখন তার একটি কুকুরের বাচ্চা দরকার।

 একদিন যাদববাবু ডাকেন, 'নাগা?'

 নাগা বলে, 'কি কন?'

 ‘বাগানের আম য্যান চুরি যায় রে।'

 'আমারও তাই সন্দ লাগে কর্তা।'

 সেদিন রাত্রি তিনটার সময় দু’জন আহত আমচোরকে বাগান থেকে বাড়িতে ধরে এনে নাগা একটা হৈ-চৈ সৃষ্টি করে দিল। আরেকজন আমচোর ছিল, সে পালিয়ে গেছে। নাগার বিশেষ কিছু হয় নি, কেবল তার সাধের ছিটের সার্ট গিয়েছে ফেঁসে। মশার জন্য গরমের মধ্যেও জামাটি গায়ে দিয়ে বাগানে পাহারা দিতে গিয়েছিল।

 চোর দু’জন চেনা লোক, আর চেনা লোক বলেই যাদববাবুর রাগ যেন হয় বেশী। আগুন জেলে তিনি একটা লোহার শিক টকটকে লাল করে গরম করবার হুকুম দিলেন।

 আম চুরি করাটা নাগার কাছে এমন কিছু অপরাধ নয়, পালাবার চেষ্টা