পাতা:মাঝির ছেলে - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মাঝির ছেলে
২৬

যাদববাবু এবং বাড়ির আরও কয়েকজন এসে জোটেন। মাধববাবু আসেন সেই টৰ্চটা হাতে নিয়ে।

 চালার খানিকটায় তখন ভাল করে আগুন ধরেছে। সকলে দিশেহারা হয়ে পড়েছিল, শেষ রাত্রে আমচোরের হাঙ্গামা মিটতে না মিটতে এ আবার কি কাণ্ড! কেউ হাঁকে, জল আনো, কেউ হাঁকে, লোক ডাকো, কেউ বা শুধু হায় হায় করতে থাকে। দেখে শুনে নাগা ভাবে, বিপদে পড়লে মাথা গুলিয়ে যায়, বিপদ ঠেকানোর চেষ্টার বদলে এদিক ওদিক ছুটিাছুটি করে আর আবোল তাবোল চেঁচায়, কোন্ দেশী ভ্যাবা গঙ্গারাম মানুষ এরা!

 নাগা তখন চেঁচিয়ে বলে যে, জল চাইনে এখন, বাঁশ খুঁটি যে যা পায় এনে সবাই মিলে আগে চালটা ফেলে দেবার চেষ্টা করা দরকার। পাশের চালায় আগুন লেগে বড় ঘরের চালা ধরে উঠলে সমস্ত বাড়ি পুড়ে সর্বনাশ হয়ে যাবে।

 সেনাপতির হুকুমের মত সকলে যেন এই নির্দেশের অপেক্ষাতেই ছিল, সকলের উদ্‌ভ্রান্ত ব্যস্ততার মধ্যে এবার একটা শৃঙ্খলা দেখা দেয়। যাদববাবুর ঘরের পিছনে গাদা করা বাঁশ ছিল। একটা করে বাঁশ এনে সবাই মিলে একপাশ থেকে গোয়ালের চালাটা ফেলে দেবার জন্য ঠেলতে থাকে। আমচুরির ব্যাপারটার সময় প্রতিবেশী যত লোক এসেছিল, এবার তার চেয়ে অনেক বেশী লোক এসে এই চেষ্টায় যোগ দেওয়ায় একটু পরেই খড় বাঁশের পুরানো চালাটি হুড়মুড় করে নীচে পড়ে যায়।

 তারপর হাঁড়ি কলসী ঘটি বাটি আর বালতিতে করে কাছের ডোবা থেকে জল এনে আর বাঁশ দিয়ে ঠেঙ্গিয়ে আগুনটা সকলে নিভিয়ে ফেলে।

 ততক্ষণে ভোর হয়ে গেছে। আগুন নিভিয়ে সবাই আগুন লাগার কারণ নিয়ে আলোচনা, আর কবে কোথায় কার বাড়িতে অগ্নিকাণ্ড হয়েছিল তার গল্প শুরু করে দেয়। নাগার সমালোচনা করে কেউ বলে যে তার জন্যই বড় ঘরগুলি আজ বেঁচে গেছে; আবার কেউ বলে, যে বাহাদুরিটা সে দেখিয়েছে একটু বেশী রকম, অতটা না দেখালেই ভাল