বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:মাঝির ছেলে - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৭
মাঝির ছেলে

ছিল। প্রথমে দু-পাঁচ বালতি জল ফেলে দিলেই যখন আগুন নিভানো যেতো, চালাটা মাটিতে ফেলবার জন্য এত হাঙ্গামা করবার তো কোন দরকার ছিল না। চালাটিও নষ্ট হোত না, একদিকে খানিকটা শুধু পুড়ে যেত। শুনে নাগার রাতিজাগা লাল চোখ রাগে আরও লাল হয়ে উঠে।

 সব সমালোচনার শেষ মীমাংসা করে দেন যাদববাবু। সকলকে শুনিয়ে জোর গলায় ডাকেন, ‘নাগা, এদিকে শোন।’

 নাগা কাছে গিয়ে বলে, ‘কি কন?’

 যাদববাবুর বাঁ হাতের দু’ আঙ্গুলে দু’টি এবং ডান হাতের আঙ্গুলে একটি সোনার আংটি থাকে। কড়ে আঙ্গুলের আংটি খুলে সকলের চোখের সামনে নাগার আঙ্গুলে পরিয়ে দিলেন।

 ‘শো গিয়া।’

 ‘যাই, কর্তা’।

 ‘যাই না, অখনি যা। ঘুম যদি কেউ ভাঙ্গায় তর আমারে কইস্।’

 তবু নাগা যায় না, ইতস্ততঃ করে। তার বড় খিদে পেয়েছে, আংটির বদলে যাদববাবু খাওয়ার কিছু দিলে সে বোধ হয় বেশী খুশী হত। যাদববাবু, ধমক দেওয়ার উপক্রম করলে সে ভয়ে ভয়ে বলে, ‘দু’গা মুড়ি খাইয়া যাই কর্তা?’

 আমচোরেরা যে আম চুরি করে ঝুড়ি বোঝাই করেছিল তারই পাঁচ ছ’টা আম দিয়ে মেখে এক পেট মুড়ি খেয়ে নাগা ঘুমোতে গেল। যাদববাবু তখন পারেশকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘আগুন ধরল। ক্যামনে রে পরশা?’

 পরেশের মুখ শুকিয়ে গেছে, ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে বলল, ‘আমি জানুম ক্যামনে কর্তা? গাই বাছুরের দড়বড়ানি শুইনা—’

 ‘জানস না?’

 'না কর্তা!'

 যাদববাবু আর কথাটি না বলে অন্দরে চলে গেলেন। নিজের ঘরে গিয়ে পরেশ দেখল এর মধ্যেই নাগা অঘোরে ঘুমিয়ে পড়েছে। নাগার আঙ্গুলের আংটির দিকে তাকিয়ে বড়ই হিংসা হতে লাগল পরেশের, কিন্তু