বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:মাঝির ছেলে - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩১
মাঝির ছেলে

 নাগা এতক্ষণ সকলের সঙ্গেই চলছিল, কণিকার কথায় অপমানবোধ করে সে হনহন করে খানিকটা এগিয়ে গেল। একেবারে বাড়ি গিয়ে হাজির হবার ইচ্ছাই তার হচ্ছিল, কিন্তু ছেলেমেয়েগুলিকে দেখবার দায়িত্ব নিয়ে সকলকে ফেলে তো আর চলে যাওয়া যায় না। যেমন বোকা আর আদেখলা ছেলেমেয়েগুলি, ডোবায় শাপলা ফুটেছে দেখে তুলতে গিয়ে দুটো একটা হয়তো ডুবেই মরে যাবে। নিজেকে একটু তফাতে তফাতে রেখেই সন্ধ্যার সময় সকলকে নিয়ে সে বাড়ি পৌঁছল। আর পৌঁছেই সটান চলে গেল নিজের ঘরে।

 মুখখানা হাঁড়ি করে পরেশ বিড়ি টানছিল, নাগাকে দেখেই মুখ খিঁচিয়ে অভ্যর্থনা জানাল, ‘আসেন গো সত্যবাদী যুধিষ্ঠির!’

 নাগার হঠাৎ কেন যে বিড়ি টানার শখ জাগল, বোধহয় মনটা খারাপ ছিল বলে। হাত বাড়িয়ে বলল, ‘বিড়ি দে’তো পরেশ।’

 রাগে পরেশের বিষম লেগে গেল, ‘আরে আমার খাতির রে। ওনারে বিড়ি দিব। চুরুট খাইবার পার না কর্তার? চুরুট বখশিশ দেয় না কর্তা? ‘গোইনন্দা বজ্জাৎ।’

 এবার ব্যাপার বুঝে নাগা বলল, ‘মারুম। কইলাম পরশা।’

 পরেশ বলল, ‘ক্যান মারবি, গোইন্দা না তুই? কর্ত্তারে কস্ নাই তুই? আমারে কয় কমু না, তলে তলে কর্তারে গিয়া কয়—মাইনষে করে এমন কাম?’

 ‘আমি কই নাই।’

 কিন্তু পরেশ তা স্বীকার করে না, নাগা ছাড়া আর কে জানত তার আগুন লাগানোর গোপন কথা? নাগাকে সে আবার গাল দেয়, বলে যে নাগা মিথ্যা-কথার রাজা, এক নম্বরের শয়তান আর অমানুষ গোয়েন্দা, পুলিশের গোয়েন্দাগিরি করে না কেন সে, বড়লোক হয়ে যাবে? নাগা তখন তাকে বিনা নোটিশে মারতে আরম্ভ করে দেয় এবং তার এক হাতের গলা টিপুনি আর অন্য হাতের কিল চড় পেয়ে এক মিনিটের মধ্যেই পরেশ চোখে সরষের ফুল দেখতে আরম্ভ করে। সে কি জানত এই ঝগড়া ভাল করে জমবার আগেই নাগা মারতে আরম্ভ করবে। অমন কত