বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:মাঝির ছেলে - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৩
মাঝির ছেলে

করা মাত্র সে বলেছিল, চোখ রাঙাইয়া যদি জিগান কর্তা, জবাব দিমু না। অখন কি আমি দুষী? সগ গলে দুষী কইলে তখন স্যান দুষী হমু। শুনে সভাপতি আর অন্য কয়েকজন ভদ্রলোক তো রেগে টিং! এই মারেন তো এই মারেন নাগাকে, কিন্তু তার চেহারা দেখে ভরসা পান না। শেষে বিনা বিচারেই তাকে দোষী সাব্যস্ত কবে শাস্তি দেওয়া হল, যাকে সে মেরেছিল সে তার গালে মারবে সাতটা চর আর পিটে মারবে সাতটা কিল। সকলের সামনেই মারবে। ভদ্রলোকেরা সকলেই সায় দিলেন, কিন্তু মাঝিরা বেঁকে বসল। এ কোন দেশী বিচার, দোষ প্রমাণ হয়ে থাকে জরিমানা হোক, কিলচড় কেন? কিন্তু নাগা শাস্তি মেনে নেওয়ায় কারও কিছু বলবার রইল না। যাকে সে মেরেছিল সে ভয়ে ভয়ে উঠে এসে তার গালে সাতটা চড় আর পিঠে সাতটা কিল মারলি, ঘুম পাড়ানোর সময় মা যত জোরে ছেলেকে থাবড়ায় আর আদর করে যত জোরে"কিল মারে তার চেয়েও আস্তে।

 সেদিন থেকে ভদ্রলোকের ওপর নাগার মনে একটা গভীর অশ্রদ্ধা জেগে আছে। ডাকিয়ে এনে কেউ চোটপাট করলে তার গা জ্বলে যায়। কিন্তু মাধববাবু যাদববাবুর দাদা বলে আর যাদববাবুকে সে শ্রদ্ধা করে ও ভালবাসে বলে কোন রকমে নিজেকে সামলে রেখে সে কথার জবাব দিয়ে গেল। সব শুনে মাধববাবু মন্তব্য করলেন, ‘স্পাই আর মিথু্যক বলেছে, এমন কিছু খারাপ গাল তো দেয় নি। গাল দিলেই বা তুই মারবি কেন ওকে, এসে নালিশ করতে পারলি না। আমার কাছে?”

 একজন গাল দিলে মেয়েছেলের মত কাঁদতে কাঁদতে এসে নালিশ করবে! কি আর বলা যায় এ কথার জবাবে, নাগা চুপ করে রইল।

 মাধববাবু আবার বললেন,'ওসব গুণ্ডামি এখানে চলবে না বাপু। তুমি বিদেয় হও। কাল সকালে মাইনে নিয়ে—'

 কণিকা মিনতি করে বলল, ‘ওকে তাড়িয়ে দিও না বাবা, ও আর কক্ষনে কাউকে মারবে না।’

 মাধববাবু বিরক্ত হয়ে বললেন, ‘তুই চুপ কর।’

 কণিকা গো ধরে বলল, ‘না, তুমি ওকে তাড়াতে পারবে না। ওর