পাতা:মাঝির ছেলে - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মাঝির ছেলে
৩৬

বেড়ান অন্ধকারে, মেয়েছেলেকে অমন করে হাসতে শুনলে তারা এসে ভর করেন। সাবধান, সাবধান!

 নাগা বলল, ‘ভূত পেত্নী ডরাই না মামী, আমার ঘাড়ে ক্ষর করলে আমিই তেনাগো ঘাড় মটকাইয়া দিমু|’

 ‘তর কথা ভিন্ন, পুরুষ না তুই?’

 খানিক পরে নকুল মাঝি দোকান থেকে সওদা নিয়ে ফিরে এল। নাগাকে দেখেই সে ভারি খুশী। সওদা নামিয়ে রেখেই সে বলল, ‘আংটিটা দেখি নাগা?’

 গ্রামে নাকি নাগার নাম ছড়িয়ে পড়েছে, নানা রকম গল্প রটে গেছে মুখে মুখে। গোয়াল-ঘরের আগুন নেভানোর জন্য যাদববাবু হাতের আংটি খুলে পুরস্কার দিয়েছেন, এটা অনেকের মনঃপুত হয় নি। কেউ তাই বলছে প্রাণের মমতা ছেড়ে সে গরুগুলিকে রক্ষা করেছিল, কেউ বলছে বাড়ির একটি ছেলেকে সে বাঁচিয়েছিল।

 নকুলের হাত থেকে আংটিটা নিয়ে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে রূপ বলল, ‘আমি নিলাম, আর দিমুনা।’

 বলে সে আংটিটা নিজের আঙ্গুলে ঢুকিয়ে দিল। মা আর বাবা দু’জনেই ধমকে উঠতে আংটিটা খুলে নাগার কোলে ফেলে দিয়ে য়াগ করে বিছানায় উঠে শুয়ে পড়ল। সেখান থেকে বলল, ‘সত্যি নিতাম নাকি আংটি, তামাশা বোঝা না তোমরা?’

 নাগার একবার মনে হল। আংটিটিা রূপাকে দিয়ে দেয়, কিন্তু আংটি দেবার অধিকার কি তার আছে? যাদববাবু যখন জিজ্ঞাসা করবেন। আংটি কোথায় গেল, সে কি জবাব দেবে? একটা উপায় অবশ্য আছে রূপাকে আংটি দেবার, সে যদি রূপাকে বিয়ে করে। বৌকে আংটি দিয়েছে শুনলে যাদববাবু তো আর কিছু মনে করতে পারবেন না। কথাটা ভেবে নাগার বড় লজ্জা বোধ হয়, মনে হয় বুড়ো নকুল বুঝি টের পেয়ে যাবে আংটি দিয়ে অভিমান ভাঙ্গানোর জন্য সে রূপাকে বিয়ে করবার মতলব আঁটছে।