পাতা:মাঝির ছেলে - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

পাঁচ

রাত্রি দশটার সময় সদরের অনেকগুলি জেটির একটিতে লঞ্চ ভিড়ল। নাগা একটু আশ্চর্য হয়ে ভাবল, এ ব্যাপারটা হল কেমন? কোম্পানীর ঘাটে বাইরের লোকের জাহাজ ভেড়া যদি বারণ না হয়, আটখামারে ভেড়ে নি কেন যাদববাবুর জাহাজ? মাঝনদীতে জাহাজ থামিয়ে ডিঙ্গি চেপে ডাঙ্গায় যাতায়াতের হাঙ্গামা তিনি কেন করেছিলেন? কারণটা নাগা কিছু কিছু অনুমান করতে পারে না তা নয়, কিন্তু অনুমানে কি এই বয়সের কৌতুহল মেটে?

 ‘একটা কথা জিগামু, কর্তা?’

 প্রশ্ন শুনে, যাদববাবু ভারি খুশী। ব্যাপারটা তবে চোখ এড়িয়ে যায় নি নাগার, সব বিষয়েই তার দৃষ্টি আছে। আটখামারে তিনি লঞ্চ ভেড়ান নি কেন সেটা যদি নাগা বলতে পারত-

 ‘মন কয়, জাহাজ কিনার বিত্তান্ত আপনে য্যান গোপন রাখছেন, কর্তা। আটখামারে আপনেরে চিনে না অমন মানুষ নাই, জাহাজ তাই তফাতে থুইয়া দিচ্ছিলেন।’

 শুন যাদববাবু নাগার পিঠ চাপড়ে দ্যান, বলেন, ‘হ, নাগার মাথায় মগজ কিছু আছে।” গর্বে নাগার বুক ফুলে ওঠে, যাদববাবু তার অনুমানশক্তির পরিচয় পেয়ে অবাক হয়ে আছেন, এর চেয়ে বড় প্রমাণ আর কি হতে পারে যে তার মত বুদ্ধিমান ছেলে জগতে নেই?

 লঞ্চ কেনার খবরটা চেনা লোককে কেন তিনি জানাতে চান না সে কথা বলা নাগার পক্ষে সম্ভব নয়, যাদববাবু তাই এবার খেলার ছলেই হাসিমুখে জিজ্ঞাসা করেন, ‘জাহাজ কিনার বিত্তান্ত গোপন রাখছি ক্যান ক’দেখি নাগা? যদি কইবার পারস, এক টাকা পুরস্কার দিমু|’

 নাগা বলে, ‘বড় কর্তা শুনলে হাঙ্গামা করবেন বইলা গোপন রাখছেন সন্দ করি কর্তা।’

 হায়, যাদববাবুকে একেবারে স্তম্ভিত করে দেবে আশা করে নাগা তার