কাছে গেলেন। প্রথমে গোলগাল মুখের প্রকাণ্ড গহবর থেকে বিনয়ের হাসি উছলে ফেলতে ফেলতে নিতাই তো তাকে অভ্যর্থনা করে বসাল। তারপর লঞ্চ ভাড়া করার কথা উঠতে গম্ভীর ও বিষণ্ন হয়ে হাত বুলোতে লাগল ভুঁড়িতে। হায়, মুখের ওপর স্পষ্ট করে কি যাদববাবুকে বলতে। হবে তার লঞ্চের কোন দরকার নেই। নিতাই-এর, দরকার থাকলে আগে এ বিষয়ে আলোচনা করবার সময় নিতাই কথা এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করত। না, ভাসা ভাসা জবাব দিত না, উদাস ভাবে বলত না, যে কারবারে তার লোকসান যাচ্ছে! সে সব ইঙ্গিত বুঝতে না পারার মত ছেলেমানুষ তো যাদববাবু নন।
নিতাই একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে, সোজা ভাষাতেই যাদববাবুকে বুঝিয়ে দেবার চেষ্টা করে যে লঞ্চ দিয়ে সে করবে কি? সময় বাঁচাবার কোন দরকার তো তার নেই! তিন দিনের জায়গায় লঞ্চের সাহায্যে একদিনে মাল পৌছে দিলেও খদ্দের হয়তো সাতদিন পরে সে মাল খালাস করে নেবে! এমনি ধীরে সুস্থেই ব্যবসা চলে, ব্যবসাতে কি তাড়াহুড়ার স্থান আছে? তবে কখনো যদি মাল যোগাড় করতে বেশী দেরি হয়ে যায় অথবা কেউ যদি এসে বলে যে কাল তার অমুক ঘাটে অমুক মাল পৌঁছে দেওয়া চাই পাঁচশো মণ, তখন লঞ্চ স্টীমার ভাড়া করতে হয়। তবে সেটা ঘটে কদাচিৎ।
“আগে কও নাই ক্যান নিতাই?”
“কইছিলাম, আলগোছে কইছিলাম। আপনারে নি পষ্ট কইরা কওন যায়।”
যাদববাবু লঞ্চে ফিরে গেলেন। বেশ বুঝা যায়, তিনি বড় মুষড়ে গেছেন। অর্ধেকের বেশী সম্পত্তি বাঁধা রেখে দু'মাস আগে লঞ্চটি কিনেছিলেন, ভেবেছিলেন অল্প দিনেই লঞ্চের দাম লঞ্চ থেকেই তুলে নিতে পারবেন। দু’মাসে তার সাতান্ন টাকা আয় হয়েছে। লাভ নয়, আয়। এভাবে চললে লঞ্চের পেছনে তাঁর একমাসের খরচ ক’মাসে উঠবে কে জানে!
লঞ্চে না উঠে নাগা খোঁজ নিতে গেল, কোথায় কোন্ নৌকায়