কণিকা বলল, 'বেজী এনেছিস আমার, বেজী?'
নাগা বলল, 'কিসের বেজী?'
'আনিস নি তো? আচ্ছা বেশ। তোমার সঙ্গে কোনদিন আমি কথা বলি তো—'
'আজ বেজী ধইরা দিমু।'
সন্ধ্যার আগে বাড়ির পিছনের বাঁশবনে নাগা বেজী-ধরা ফাঁদ পাতে আর তার ফাঁদ-পাতা দেখতে দেখতে কণিকা তাকে খবর শোনায়। বাবা আর কাকার মধ্যে ভীষণ ঝগড়া হয়ে গেছে, বেয়াদবি করার জন্য কাকা খোকাকে ভীষণ মেরেছে, পরশু রাত্রে নদীর পাড় ভেঙ্গে পড়ার ভীষণ শব্দ শুনে মা ভীষণ অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল, আজও বিছানায় শুয়ে ঘুমোচ্ছে, বাবা ভীষণ চটে গিয়ে বলেছে কাকাকে আর সম্পত্তি দেখতে দেবে না, নিজে এখানে সব দেখাশোনা করবে, অনেক দিন তারা এখানে থাকতে পাবে, ভীষণ মজা হয়েছে, না?—এইসব খবর। কণিকার বলাটা ভীষণ এলোমেলো হলেও নাগা মোটামুটি বুঝতে পারে যাদববাবু কেন লঞ্চটা অনেক টাকা লোকসান দিয়ে ফেরত দিতে চেয়েছিলেন, তারপর ভিমনার বিপজ্জনক প্রস্তাবে কেন রাজী হয়ে গেছেন।
'কাকা ভীষণ জুয়াচোর, না? বাবাকে ভুলিয়ে আমাদের সব বেচে দিয়ে লঞ্চ জাহাজ কিনেছে? কাল কাকা আমাদের লঞ্চ জাহাজে বেড়াতে নিয়ে যাবে-আমাদের সবাইকে!'
নাগা উঠে দাঁড়াল। - 'ছোটকর্তা জুয়াচোর?'
সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে, নির্জন বাঁশবন, লম্বা চওড়া ডাকাতের মত চেহারা নাগার। কিন্তু ভয় পেয়েও ভয় পাওয়ার মেয়ে কণিকা নয়। ‘হু, জুয়াচোর তো। বাবাকে ভুলিয়ে-ও কি করছিস?'
দু’ঘণ্টা ধরে যে বেজী-ধরা ফাঁদ তৈরী করেছিল দু’মিনিটে ভেঙ্গে চুরমার করে দিয়ে নাগ গটগট করে চলে গেল। কণিকা কাঁদতে কাঁদতে নালিশ করতে গেল তার বাবার কাছে। নালিশ শুনে মাধববাবু হুঙ্কার দিয়ে উঠলেন, ‘বটে! ডাক্ তো হারামজাদা ব্যাটাকে!'